• "দলিত হয়ে মন্দিরে ঢুকবি এত সাহস!', গুজরাটে করুণ পরিণতি যুবকের ...
    আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুজরাত রাজ্যকে প্রায়ই সংবিধানিক সুরক্ষা, সমৃদ্ধ প্রবাসী সমাজ ও উদ্যোক্তা মানসিকতার জন্য গর্বিত করে উপস্থাপন করা হয়। ভারতের অন্যতম সক্রিয় প্রবাসী সম্প্রদায় হিসেবে গুজরাতিরা বিশ্বের নানা প্রান্তে স্থায়ী হয়েছে—অভিযোজন, পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রতীক হিসেবে। কিন্তু এই উদারতা ও অভিযোজন ক্ষমতা যেন কেবল বিদেশের মাটিতেই সীমাবদ্ধ। দেশের ভেতরে, বিশেষত গ্রামীণ গুজরাতে, জাতিভিত্তিক বৈষম্য ও দলিত নিপীড়নের চিত্র আজও তীব্রভাবে উপস্থিত।

    গুজরাত সরকার ও পুলিশের রেকর্ডেই প্রতিফলিত, রাজ্যে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধ অব্যাহত। দলিতদের বিয়েতে ঘোড়ায় চড়া নিষিদ্ধ করা, উৎসব-অনুষ্ঠানে তাদের আলাদা করে রাখা, প্রকাশ্যে মারধর, সামাজিক বয়কট—এসব এখনো নিয়মিত ঘটনা। মন্দিরে প্রবেশের অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। এই সামাজিক নিষ্ঠুরতার সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা গেল সবরকাঠা জেলায়।

    খেদাওয়াদা লক্ষ্মীপাড়া গ্রামের ৩৮ বছর বয়সী দলিত শ্রমিক শৈলেশ সোলাঙ্কি কাল ভৈরব মন্দিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় আক্রান্ত হন। বলোচপুরের এক মোড়ে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করার সময় ধনপুরা গ্রামের বাসিন্দা ভরৎ প্যাটেল তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি ওই এলাকায় রয়েছেন। সোলাঙ্কি উত্তর দেন যে তিনি মন্দিরে যাচ্ছেন। কিন্তু প্যাটেল তার জাতিগত পরিচয় জানতে চান এবং আধার কার্ড দেখতে চান। কার্ড দেখে সোলাঙ্কির দলিত পরিচয় জানতেই তিনি কটূক্তি ও গালিগালাজ শুরু করেন, এমনকি থাপ্পড় মারতে থাকেন। এরপর তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাতে দলিত হয়ে কে মন্দিরে যায়?”

    দুই গ্রামবাসী এসে পরিস্থিতি সামলালেও, প্যাটেল এখানেই থামেননি। তিনি সোলাঙ্কিকে নিজের স্কুটারে তুলে কিছু দূর নিয়ে গিয়ে ঘোরওয়াড়া গ্রামের কাছে নামিয়ে দেন এবং হুমকি দেন—“আর যদি এই এলাকায় আসো, ফল ভোগ করতে হবে।” ভীত সোলাঙ্কি বাড়ি ফিরে পরিবারকে ঘটনার কথা জানান এবং পরে হিম্মতনগর গ্রামীণ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। নরেন্দ্রসিংহ ও জগতসিংহ নামে দুই ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে তার পাশে দাঁড়ান। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ধারার সঙ্গে সঙ্গে এসসি/এসটি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে মামলা রুজু হয়েছে।

    সোলাঙ্কির ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্যের নানা প্রান্তেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এ বছরের মার্চ মাসে, একই জেলার বাদোল গ্রামে এক দলিত ব্যক্তিকে মন্দিরে প্রবেশের অভিযোগে মারধর করে, নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো হয়। মান্ডল গ্রামে, মৃত পশুর দেহ অপসারণে অস্বীকার করায় দুই দলিত যুবককে তথাকথিত গোরক্ষকরা আক্রমণ করে। নবরাত্রিতে গরবা নাচায় অংশগ্রহণ করায় এক কিশোরীকে চুল ধরে টেনে বের করা হয়। উনা তালুকার আঙ্কোলালি গ্রামে এক দলিত ব্যক্তিকে তার ঘরেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়; ওই ঘটনায় ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রতিবেশী মধ্যপ্রদেশে, এক দলিত যুবককে বোনের যৌন হয়রানির অভিযোগ জানানোয় পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

    এইসব ঘটনাগুলি একটিই কথা স্পষ্ট করে—ভারতের সংবিধান যেভাবে সমানাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবের সমাজ আজও সেই প্রতিশ্রুতিকে পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারেনি। গুজরাতের মতো উন্নয়নশীল ও প্রবাসী গর্বের রাজ্যেও জাতি এখনো নির্ধারণ করে কে কোথায় যেতে পারে, কে কীভাবে বাঁচবে, কে কাকে স্পর্শ করতে পারবে। গুজরাতের দলিত সমাজ আজও জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অসম মর্যাদা, ভয় ও হুমকির মধ্যে বাস করছে। এই সামাজিক বাস্তবতা বদলাতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানসিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তর অপরিহার্য। সংবিধানের মূল আত্মা—“সমতা ও মানব মর্যাদা”—রক্ষার দায় সমাজের প্রতিটি নাগরিকের।
  • Link to this news (আজকাল)