• পর্যটন সংস্থা-হোটেলে ঘনঘন আসছে বুকিং বাতিলের ফোন
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: ভরা মরশুমে পাহাড়ে ঘোর বিপর্যয়। আর এরই জেরে বড়সড় ধাক্কা পর্যটনে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় লক্ষ্মীলাভের আশায় বুক বেঁধেছিলেন পাহাড়ের হোটেল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন যেভাবে বুকিং বাতিলের ফোন আসতে শুরু করেছে, তাতে চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

    প্রতি বছরই পুজোর মরশুমে পর্যটকের ঠাসা ভিড় থাকে পাহাড়ে। এবারও দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিকের পাশাপাশি পাহাড়ের অফবিট ডেস্টিনেশনগুলিতে দীপাবলি পর্যন্ত হোটেল, রিসর্ট, হোম স্টে ফাঁকা নেই। কিন্তু বিপর্যয়ের জেরে রাতারাতি বদলাতে শুরু করেছে ছবিটা। পর্যটকদের অনেকেই বুকিং বাতিলের জন্য ফোন করছেন হোটেলে কিংবা ট্যুর অপারেটরদের। ঝুঁকি নিয়ে এই মুহূর্তে তাঁরা পাহাড় ভ্রমণে নারাজ। অনেকে আবার দু’মাস আগে কাটা ট্রেনের কনফার্ম টিকিট থাকায় নিউ জলপাইগুড়ি কিংবা শিলিগুড়িতে নেমে পাহাড়-ডুয়ার্সে ‘নিরাপদ’ জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। সেইমতো চটজলদি ট্যুর প্ল্যান বানিয়ে দেওয়ার জন্য লাগাতার ফোন আসছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে এক-দু’দিনের মধ্যে যাঁদের পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা কিংবা যাঁরা ইতিমধ্যেই শিলিগুড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে বেশি টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে পাহাড়ে উঠলেও বেশিরভাগই এভাবে ঘুরতে যেতে নারাজ। সবমিলিয়ে উত্তরের পর্যটন শিল্পে সাময়িক সংকট।

    দার্জিলিংয়ের আস্তাবল রোডে একটি হোটেলের মালিক জীবন নন্দী বলেন, দীপাবলি পর্যন্ত আমার হোটেলের সবক’টি রুম অনেক আগে থেকেই বুকিং হয়ে রয়েছে। বেশিরভাগই কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের পর্যটক। বিপর্যয়ের খবর পেয়ে তাঁদের অনেকে এখন পাহাড়ে বেড়াতে আসতে চাইছেন না। ফোন করে বুকিং বাতিল করার জন্য বলছেন। আমরা অবশ্য তাঁদের জানিয়ে দিচ্ছি, বুকিং বাতিল করলেও হোটেলের রুম ভাড়া বাবদ অগ্রিম জমা দেওয়া টাকা ফেরানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে অন্য সময় আসতে পারেন পর্যটকরা।

    হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক তথা শিলিগুড়ির অন্যতম পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, ভরা মরশুমে পাহাড়ে এই বিপর্যয়ের জেরে পর্যটন শিল্পে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এসময় পাহাড়ে প্রচুর বুকিং রয়েছে। কিন্তু অনেকেই রাস্তাঘাটের কথা ভেবে যেতে চাইছেন না। বুকিং বাতিল করতে বলছেন। আমরা তাঁদের কয়েকটি দিন ধৈর্য্য ধরার জন্য বলছি। তবে এক-দু’দিনের মধ্যে যাঁদের পাহাড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে, তাঁদের নিরাপদ জায়গা বেছে তবেই যেতে বলা হচ্ছে। তাঁর দাবি, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মিরিক। এছাড়া দার্জিলিংয়ের সোনাদা, দুধিয়া সহ পাহাড়ে একাধিক জায়গায় বহু হোম স্টে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

    অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, আমরা পর্যটকদের পাহাড়ে 

    বেড়াতে আসার বুকিং বাতিল করতে বারণ করছি। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাঁদের পাহাড়ের রাস্তাঘাট, বিভিন্ন ডেস্টিনেশনের আপডেট দিচ্ছি। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)