• উদ্ধার শতাধিক পর্যটক, অতিরিক্ত বাস চালাচ্ছে এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়েছে প্রশাসন। শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত তারা ধস কবলিত এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে শতাধিক পর্যটককে। তবে, যাঁরা আটকে রয়েছেন, হোটেলেই থাকার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসন। একই সঙ্গে পর্যটকদের জন্য চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন। অতিরিক্ত চারটি স্পেশাল বাস নামিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)। 

    পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে বেড়াতে এসেছিলেন পর্যটকরা। তাঁদের একাংশ সিকিম ঘুরে কালিম্পং ও দার্জিলিং হয়ে সমতলে নামার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই অবস্থায় শনিবার ভোর রাত থেকে অবিরাম ভারী বৃষ্টি ও ধসে বিধ্বস্ত পাহাড়। 

    ফলে চরম বেকায়দায় পড়েছেন পর্যটকরা। তাঁদের অনেকে সফর কাটছাঁট করে সমতলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ধসে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। কার্যত পাহাড় ও সমতলের মধ্যে এমন যোগাযোগহীন 

    অবস্থায় একাংশ পর্যটক আপাতত পাহাড়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। এক পর্যটক বলেন, পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে অফবিট স্পটে বেড়াতে এসেছিলাম। সফর শেষ করে শনিবার সমতলের দিকে রওনা হই। বৃষ্টির জেরে রাস্তায় আটকে গিয়েছিলাম। পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতার অনেক ঝক্কির পর কোনওরকমে শিলিগুড়িতে এসেছি। 

    মিরিকের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন অনেকে। আবার অনেক পর্যটক রবিবার সকালে সুখিয়াপোখরির হোটেল থেকে শিলিগুড়ি রওনা হন। রাস্তায় যানবাহনের লম্বা লাইন। ফলে তাঁদের সফর 

    আরও দীর্ঘায়িত করে। ট্রাফিক পুলিশ ওয়ান-ওয়ে পদ্ধতিতে যান চলাচলের ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আর এক পর্যটক বলেন, রাস্তার বহু জায়গায় অল্প ধস ছিল। পাহাড়ের নুড়ি, বোল্ডার ও মাটিতে কিছু রাস্তা ছিল অবরুদ্ধ। যার জেরে দার্জিলিংয়ের পাঙ্খাবাড়ি রাস্তায় ছিল যানবাহনের লম্বা লাইন। সমতলে নামতেই দীর্ঘক্ষণ সময় লেগেছে।

    দার্জিলিংয়ের মহকুমা শাসক রিচার্ড লেপচা বলেন, শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত জোরবাংলো, সুখিয়াপোখরি, ঘুম, প্রভৃতি এলাকা থেকে কয়েকজন পর্যটককে নিরাপদে সমতলে পাঠানো হয়েছে। পর্যটকদের বেশি সমস্যা হয়নি। কালিম্পং জেলাশাসক বালাসুব্রহ্মনিয়ান টি বলেন, পর্যটকদের যাতে সমস্যা না-হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হয়েছে। জাতীয় সড়কের অবস্থা, যান চলাচল নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়ার কাজ চলছে নিয়মিত। এক পুলিশ অফিসার জানান, যাঁরা এখনও পাহাড়ে রয়েছেন, তাঁদের হোটেলে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন ট্যুর অপারেটার কালিম্পং থেকে পর্যটকদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে সমতলে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল বলেন, জোড়বাংলো-সুখিয়াপোখরি ব্লকের তাবাকোশি এলাকায় ৭০, গুরুদংয়ে ৪০ এবং অন্যান্য এলাকায় প্রায় ২০ জন পর্যটক আটকে রয়েছেন।

    অন্যদিকে, পর্যটকদের সহায়তায় হেল্পলাইন চালু করেছে পর্যটন দপ্তর, দার্জিলিং পুলিশ ও শিলিগুড়ি পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শিলিগুড়ি পুরসভা রোহিনীতে ও শিলিগুড়িতে দুটি হেল্প ডেস্ক চালু করেছে। শিলিগুড়ি পুরসভার হেল্প লাইন নম্বর-৭৫৫৭০৩৫১৯৪। পর্যটকদের সহায়তায় তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে কলকাতা পর্যন্ত অতিরিক্ত চারটি বাস চালায় এনবিএসটিসি। যার মধ্যে একটি এসি এবং তিনটি সুপার। এনবিএসটিসির শিলিগুড়ির ডিভিশনাল ম্যানেজার সৌভিক দে বলেন, দৈনিক দুটি ভলভো, এসি, রকেট ও সুপার বাস চলে। এর বাইরে এদিন আরও চারটি স্পেশাল বাস চালানো হয়। আজ, সোমবার আরও ছয়টি স্পেশাল বাস চালানো হবে। কোচবিহার ডিভিশন থেকে আরও চারটি বাস জোগাড় করার চেষ্টা চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)