• প্রকৃতির রোষে দার্জিলিং-ডুয়ার্স, প্রবল বর্ষণ-ধসে বিপর্যয়, মৃত অন্তত ২৮
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: প্রকৃতির রোষে তছনছ ‘পাহাড়ের রানি দার্জিলিং’। পরিবেশের প্রকোপে বিপর্যস্ত ডুয়ার্স। শনিবার রাতের প্রবল বর্ষণ, একের পর এক সড়কে ধস, ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তা-তোর্সা-জলঢাকা। তার জেরে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন বিপর্যয় শেষ কবে দেখেছে, মনে করতে পারছে না পাহাড় থেকে সমতল। একে একে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে রোহিণী, মিরিক, মংপুর রাস্তা। সিকিম-কালিম্পংয়ের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, দার্জিলিংগামী ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক অংশ সহ ৫০টির বেশি জায়গা বিধ্বস্ত। ভয়াবহ পরিস্থিতি বানারহাট, গয়েরকাটা ও নাগরাকাটা সহ সংলগ্ন এলাকারও। এই গোটা অঞ্চলে জলবন্দি কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গিয়েছে একাধিক রাস্তা ও সেতু। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। পাহাড়ে মিরিক ও দার্জিলিং-পুলবাজার ব্লকেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৩ জনের। সরকারি হিসেবে অবশ্য রাত পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, পাঁচটি দেহ ভেসে এসেছে নদীর জলে। তারা নেপালের নাগরিক কি না, সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙ্গা চা বাগানের মডেল ভিলেজে রবিবার বিকেল পর্যন্ত এক শিশু সহ পাঁচজনের মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে। এখনও এই ভিলেজের আট জন নিখোঁজ। 

    পূর্বাভাস অনুযায়ী শনিবার রাত থেকে বেড়েছে বৃষ্টির দাপট। দার্জিলিংয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৬৮.৮ মিমি। তার জেরে দার্জিলিং, মিরিক, সুখিয়া, পুলবাজার প্রভৃতি এলাকায় বাড়ি চাপা পড়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও কিছু ঘরবাড়ি পাহাড়ের খাদে ঝুলছে। বেসরকারি সূত্রে খবর, দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে ধস কবলিত এলাকার সংখ্যা ৫০টিরও বেশি। ধসের দাপট মিরিকে ছিল সর্বাধিক। ভেঙেছে সেতু, উপচে গিয়েছে তিস্তা। বালাসন নদীর স্রোতের জেরে মিরিকে ভেঙেছে লোহার ব্রিজ। ফলে দুধিয়া হয়ে শিলিগুড়ির সঙ্গে মিরিকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দার্জিলিং শহরে পাইপলাইন, একাধিক বাড়ি, বিজনবাড়িতে ছোট রঙ্গিত নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত। বর্ষণ-ধসের আতঙ্কে তখন শিলিগুড়িকে মনে হচ্ছিল দূরের গ্রহ। ভরা মরশুমে দিশাহারা পর্যটকরা। কারও ধরার ছিল ট্রেন, কারও ফ্লাইট। কিন্তু সমতলে পৌঁছনো যাবে কীভাবে? টয় ট্রেন, টাইগার হিল সহ যাবতীয় পর্যটনস্থল বন্ধ। নেমে পড়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পাহাড়ে দু’টি ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে দুর্গতদের। কালিম্পংয়েও বৃষ্টি হয়েছে ১৬৬ মিমি। তিস্তার ছোবলে রবিঝোরা থেকে শ্বেতীঝোরার মাঝে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশকিছু অংশ উধাও। রবিবার সকালে তিস্তার জলে তলিয়ে যায় জাতীয় সড়কের ২৯ মাইল এলাকা। কালিম্পং হয়ে সিকিমগামী আর একটি মহাসড়ক ৭১৭-এ ধস বিধ্বস্ত। শিলিগুড়ি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে কালিম্পং ও সিকিমের সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপা বলেন, ‘এই বিপর্যয়ের সময় সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’ 

    জলপাইগুড়ি জেলায় সবথেকে খারাপ অবস্থা জলবন্দি নাগরাকাটার। এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। খাবার ও পানীয় জল পৌঁছে দিতে বেগ পেতে হয়েছে উদ্ধারকারী দলের। শিসামারা, তোর্সা, বুড়ি তোর্সা ও হলং নদীর জল ফুলেফেঁপে ডুবিয়ে দিয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানও। গোরুমারায় জলঢাকা নদীতে ডুবে মারা গিয়েছে একটি গন্ডার। নকশালবাড়িতে মেচি নদী পারাপারের সময় তলিয়ে যাওয়া একটি হস্তিশাবককে উদ্ধার করেছে বনদপ্তর। লোকালয়েও একাধিক হিংস্র পশু চলে এসেছে বলে খবর। 
  • Link to this news (বর্তমান)