• ফুলবাড়ির পোড়াঝারে মহানন্দার বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫০’র বেশি পরিবার
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: শনিবার রাতভর প্রবল বৃষ্টিতে হুহু করে বেড়ে যায় মহানন্দা নদীর জলস্তর। তার জেরে নদী বাঁধ ভেঙে ভাসল ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পোড়াঝার এলাকা। ২৫০ এর বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বহু গবাদিপশু জলে ভেসে গিয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে জল ঢুকে সব তছনছ করে দিয়েছে। 

    রাতের অন্ধকারে আচমকাই নদীর জল ঢুকে পড়ে পোড়াঝাড়, পশ্চিম ধনতলা জ্যোতির্ময় কলোনি সহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায়। তলিয়ে যায় বহু বাড়ি, গবাদিপশু, খেতখামার। শনিবার গভীর রাত থেকে নদীর জল বাড়তে শুরু করে। গ্রামের সকলেই তখন ঘুমিয়ে। ঘরে তখন কোমর সমান জল। তাতেই ঘুম ভেঙে সকলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। সব জিনিসের মায়া ত্যাগ করে এলাকার মানুষ প্রাণ হাতে করে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন। রবিবার ভোর হতেই শুরু হয় হাহাকার। বহু মানুষ আশ্রয় নেন রামকৃষ্ণ মিশনের ত্রাণ শিবিরে। চালের বস্তা,  নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মাথায় নিয়ে মানুষ ছোটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। অনেকে জলের মধ্যে থেকে শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যান।

    শনিবার শেষ রাতে জল ঢুকতে দেখে এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য কার্তিক মণ্ডল যোগাযোগ শুরু করেন ফুলবাড়ি ব্যারেজের সমস্ত গেট খুলে দেওয়ার জন্য। ব্যারেজের ন’টি গেট খোলার পর জল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বিছানা, জামাকাপড়, খাবার, সঞ্চয় সব তখন জলের তলায়।

    এলাকার বাসিন্দা তপন রায় বলেন, হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি ঘরে জল ঢুকছে। সবাইকে ডেকে বেরিয়ে আসতে আসতে ঘরে কোমর সমান জল হয়ে যায়। বৃদ্ধা আশা বর্মন বলেন, আমি একাই থাকি। ভোর ৪টা নাগাদ ঘরে জল ঢোকে। কোমর সমান জল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলাম না। প্রতিবেশীরা টেনে তুলে আমাকে বাঁধের উপর এনে বসায়। সেই থেকে বাঁধে বসে দেখছি ঘরের সব জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করার কিছু নেই। 

    অনেকের গবাদিপশু হারিয়ে গিয়েছে। একজনের টোটো জলের তোড়ে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। প্রকৃতির এধরনের তাণ্ডব এর আগে এখানকার মানুষ দেখেননি বলে জানান। রবিবার সকালে এলাকায় যান শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি বলেন, সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খাদ্য, পানীয় জল, চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

    এদিকে, এদিন প্রথম আর্ত মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়ায় শিলিগুড়ির রামকৃষ্ণ মিশন। এখানে তাদের একটি শিক্ষা ও চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেওযা হয়। তাদের জামাকাপড় ও খাবারের ব্যবস্থা করে রামকৃষ্ণ মিশন। পরে পঞ্চায়েত সমিতি ও বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি ত্রাণের ব্যবস্থা করে। বৃষ্টি থেমেছে। জলও নেমেছে। কিন্তু আকাশে এখনও মেঘের ঘনঘটা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও বৃষ্টি হতে পারে। তাতেই নতুন করে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)