• ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি নেই জল ছাড়ছেই ডিভিসি, দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শনে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: প্রবল বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ। কোথাও ব্রিজ ভেঙে পড়েছে, কোথাও জাতীয় সড়কে ধস নেমেছে। নিম্নচাপ ও ডিভিসির ছাড়া জলের জন্য প্রবল বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গেও। কয়েক দিন আগে ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় জলাধারগুলি পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তখন জলাধারগুলি থেকে বিপুল পরিমাণে জল ছাড়ে ডিভিসি। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাত বন্ধ রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। সাম্প্রতিককালে সেখানে ভারী বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাসও নেই। তা সত্ত্বেও রবিবারের রিপোর্টে মাইথন ও পঞ্চায়েত থেকে মোট ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। যাতে উদ্বেগে রয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। রবিবার দুপুরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে দুর্গাপুর ব্যারাজে যান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। মোবাইলে ব্রিজের ও ব্যারেজের জল ছাড়ার ছবি তোলেন মন্ত্রী। 

    প্রদীপবাবু বলেন, রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণে জল ছেড়েছে ডিভিসি। পরিকল্পিতভাবে বাংলার মানুষকে সমস্যায় ফেলছে কেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বারবার কেন্দ্রকে ড্রেজিং করার অনুরোধ করেছেন। তা কানে তোলেনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। একটা সময় কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন উমা ভারতী। সেই সময়ে তিনি দামোদরের উপর দুর্গাপুর ব্যারাজে বিজেপি নেতাদের নিয়ে নৌকাবিহার করেছিলেন। ড্রেজিং করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ১১ বছর পরও বাস্তবায়িত হয়নি। নদীতে বালির চর বেড়েছে। চরে গাছ জন্মে গিয়েছে। নদীর বহন ক্ষমতা কমে গিয়েছে। এদিন সেই চরের ছবিও তুলেছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী। মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল এসে দুর্গাপুর ব্যারাজেই জমা হয়। ডিভিসির বাঁধগুলি থেকে ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল আছড়ে পড়ছে দুর্গাপুর ব্যারাজে। যার জেরে রবিবার দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকেও ৭১ হাজার ৭২৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। এই জল দামোদর দিয়ে যেতে থাকলে খানাকুল, আমতা সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়বে।

    ডিভিসির দেওয়া তথ্য থেকেই জানা গিয়েছে, মাইথনে যে পরিমাণ জল ঢুকছে, তার থেকে বেশি পরিমাণ জল বাঁধ থেকে ছাড়া হচ্ছে। রবিবার ভোরে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় মাইথন বাঁধে জল ঢুকেছে ৫৪হাজার ৪৭১ একর ফুট ওই বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৩৪ একর ফুট। মাইথনের জলস্তল রয়েছে ৪৮৪.২২ ফুট। ২৪ ঘণ্টায় পাঞ্চেতে জল ঢুকেছে ৭৯ হাজার ৯৮৪ একর ফুট। জল ছাড়া হয়েছে ৭২হাজার ৭২০ একর ফুট।  পাঞ্চেত বাঁধের জলস্থর রয়েছে ৪১৭.১১ ফুট। 

    দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি সঞ্জীবকুমার বলেন, দু’টি বাঁধের জলস্তর বেশি থাকায় জল ছাড়া হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টিপাত হয়নি। নতুন করে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও নেই। বাঁধের জলস্তর নামলে ধীরে ধীরে জল ছাড়া কমানো হবে। 

    প্রশ্ন উঠছে বাংলার এই দুর্যোগের সময়ে কেন অতিরিক্ত জল ছেড়ে বাঁধের জলস্তর নামাতে তৎপর হল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রাধীন সংস্থা। মাইথন ও পাঞ্চেতের জলস্তর বিপদসীমাও স্পর্শ করেনি। তারপরও অতিরিক্ত জল ছাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্য। এই প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, তৃণমূল বাঁধের জল ছাড়া নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
  • Link to this news (বর্তমান)