• নবদ্বীপে সেজে উঠেছে ছাঁচ ও সরায় তৈরি লক্ষ্মীমূর্তির পাইকারি বাজার
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: ধনসম্পদের দেবীর আগমনে নবদ্বীপে সেজে উঠছে ছাঁচের ও সরার লক্ষ্মীমূর্তির পাইকারি বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা আসছেন। স্থানীয় বাজারের উপর নির্ভর করেই নবদ্বীপের বিভিন্ন পাড়ার মৃৎশিল্পী পরিবারগুলির দিন চলে। আর লক্ষ্মীপুজো এলেই লক্ষ্মীলাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নবদ্বীপের দণ্ডপাণিতলা ঘাটের পালপাড়া, মণিপুর ঘাট এবং কপালিপাড়া বণিক নগর সহ সবমিলিয়ে প্রায় ২০টি পরিবার প্রতিমা গড়ে। পাইকরদের হাত ধরে এইসব মূর্তি নবদ্বীপ সহ পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়।

    মণিপুর ঘাট রোডের বাসিন্দা ছাঁচশিল্পী শঙ্কর পাল বলেন, ৩০বছর ধরে এই কাজ করছি। মাটি ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হয় না। ছয়-আট ইঞ্চি থেকে দেড়-দুই ফুট উচ্চতার ছাঁচের মূর্তি তৈরি করছি। স্থানীয় তেঘরিপাড়া বাজারে মূর্তিগুলি বিক্রি করি। মূর্তির দাম সর্বনিম্ন ২০-২৫টাকা থেকে শুরু করে ১৫০-২০০টাকা পর্যন্ত। এবছর ২০০টি ছাঁচের মূর্তি তৈরি করেছি। গৃহবধূ আশালতা পাল বলেন, ভীষণ পরিশ্রমের কাজ। তাই আমিও স্বামীর সঙ্গে মূর্তি তৈরির কাজে হাত লাগাই। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক মেলে না।

    বণিক নগরের বাসিন্দা প্রবীণ মৃৎশিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, ৩০বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের হাতে লক্ষ্মীর সরা আঁকছি। একই সঙ্গে প্রতিমাও তৈরি করি। এবছর বর্ষার কারণে কাজকর্ম করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দুর্গা, লক্ষ্মীনারায়ণ, এক লক্ষ্মী, তিন পুতুল লক্ষ্মী-জয়া-বিজয়া, পাঁচ পুতুল, রাধাকৃষ্ণ সরা তৈরি করেছি। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সরা তৈরি করতে হয়। প্রথমে যন্ত্রের মাধ্যমে মাপ অনুযায়ী মাটি দিয়ে গোল থালার আকৃতি করি। তারপর সেটি রোদে শুকিয়ে কাঠের উনুনে পুড়িয়ে নিতে হয়। এরপর সেটির উপর রং-তুলি দিয়ে এঁকে বিভিন্ন দেব-দেবীর সরা তৈরি করি। এক একটি সরা মাত্র ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করছি। বর্তমানে নবদ্বীপে সরাশিল্পীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে নবদ্বীপের বাজারে তাহেরপুরের সরা ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।

    আলোছায়া মোড় নিমতলার বাসিন্দা মৃৎশিল্পী দেবু পাল বলেন, লক্ষ্মীমূর্তি তৈরি করতে বেশি সময় পাওয়া যায় না। সেইজন্য বেশি সংখ্যায় তৈরি করি না। ছোট ছাঁচের লক্ষ্মী থেকে শুরু করে পাঁচ পোয়া লক্ষ্মী তৈরি করেছি। একটু বাজার ভালো গেলে পাঁচ পোয়া উচ্চতার মূর্তিগুলি ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করি। বাজার খারাপ গেলে ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। বিভিন্ন সাইজের ছোট মূর্তিগুলি ৫০-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করি। এখন পিতল, ফাইবার এবং মার্বেল ডাস্টের লক্ষ্মীমূর্তি পাওয়া যায়। অনেকে রাসের কাঠামো পুজোর সময়ও লক্ষ্মীপুজো করে।

    নবদ্বীপ এমপি সোয়াইকা রোডের(পোড়াঘাট) দোকানদার রামরতন পাল বলেন, এক লক্ষ্মী, লক্ষ্মীনারায়ণ, তিন পুতুল, রাধাকৃষ্ণ, পাঁচ পুতুল, লক্ষ্মী দুর্গা সহ সব বিক্রি হচ্ছে। দামের কোনও ঠিক নেই। সেগুলি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট মূর্তিগুলি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার উপরে কাপড় পরানো মূর্তির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)