• লক্ষ্মীর পাশাপাশি অপ্সরা ও অপ্সরীর পুজো রাতভর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা মুরারইয়ে
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর পাশাপাশি পুজো হয় স্বর্গের অপ্সরা ছায়া ও ছবির। ঝাড়খণ্ড ও মুর্শিদাবাদের সীমানা লাগোয়া মুরারইয়ের গোঁড়শা গ্রামের প্রধান উৎসব লক্ষ্মীপুজো। গ্রামের দুই পাড়ায় দু’টি লক্ষ্মীপুজো ঘিরে যেমন মেলা বসে, তেমনি লোকসংস্কৃতি প্রতিযোগিতা হয়। প্রায়ে ৩৫০বছরের পুরনো এই দু’টি পুজো বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের মানুষকে একসূত্রে গেঁথেছে।

    গোঁড়শা গ্রামের একদিকে ঝাড়খণ্ডের পিরলিপুর ও গৌরীপুর। অপরদিকে মুর্শিদাবাদের কাশিমনগর ও বহুতাল। গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ায় বহুবছর ধরে দু’টি লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে। দুই পাড়াতেই লক্ষ্মীর দু’পাশে থাকে ছায়া ও ছবির মৃন্ময়ী মূর্তি। পুজো ঘিরে গ্রাম মিলনমেলার চেহারা নেয়।

    দুই পাড়ায় মা লক্ষ্মীর পাকা মন্দির আছে। দু’টি লক্ষ্মীপুজোর জন্য আলাদা আলাদা জমি রয়েছে। এছাড়া, গ্রামে ‘লক্ষ্মী’ নামে একটি বড় পুকুর রয়েছে। সেখানে প্রতিবছর মাছচাষ করা হয়। চৈত্র মাসে পুকুরের মাছ, জমির ধান, বিক্রির টাকা দু’পাড়ার লক্ষ্মীপুজো কমিটির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ পুজো উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করেন।

    কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে পুজো শুরুর আগে লোকসংস্কৃতি চর্চা চলে। একপাড়া কবিগানের আসর বসালে অন্য পাড়ায় তখন চলে বাউল গান। এবছর পূর্বপাড়ার পুজো উদ্যোক্তারা কবিগানের আসর বসাবেন। পশ্চিমপাড়ায় বাউলশিল্পীদের দিয়ে সারারাত গানের আসর বসানো হবে।

    লক্ষ্মীপুজোর রাতে ঝাড়খণ্ড ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ গোঁড়শায় এসে দেবীকে ভোগ নিবেদন করে পুজো দেন। পরদিন মাঝরাতে দুই লক্ষ্মীপ্রতিমা কাঁধে নিয়ে হরেকরকম বাজনা সহযোগে সারা রাত ধরে গ্রাম প্রদক্ষিণ চলে। ভোরে চাঁদের আলো ফিকে হয়ে এলে গ্রামের হাঁড়িপুকুরের পাড়ে দুই দেবীপ্রতিমা নামিয়ে আতসবাজি পোড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়। তারপর প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। প্রশাসনিক নির্দেশে এবারও গ্রিন বাজি পোড়ানোর প্রতিযোগিতা হবে।

    পুজো উদ্যোক্তারা জানান, ছায়া ও ছবি আসলে স্বর্গের অপ্সরা জয়া ও বিজয়া। এই গ্রামে তাঁরাও দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে পুজো পান। লক্ষ্মীপুজোই এই গ্রামের প্রধান উৎসব। আগে গ্রামে দুর্গাপুজোর চল ছিল না। গত চারবছর ধরে প্যান্ডেল খাটিয়ে কয়েকজন দুর্গাপুজো শুরু করেছেন।

    পশ্চিমপাড়ার পুজো উদ্যোক্তা তথা পঞ্চায়েত সদস্য সাবিত্রী রাজবংশী বলেন, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেই গ্রামের মানুষ নতুন জামাকাপড় পরেন। পুজোর সময় এখানে হিন্দুদের তুলনায় মুসলিমদের বাড়িতেই বেশি আত্মীয়স্বজন আসেন। তাঁরাও পুজোয় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সারারাত ধরে মেলা ও লোকসংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পূর্বপাড়ার পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা পঞ্চায়েত প্রধান সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, এই গ্রামের লক্ষ্মীপুজো এখন প্রসিদ্ধ।
  • Link to this news (বর্তমান)