স্বর্গপুরী থেকে কালের বিবর্তন লক্ষ্মীপুজোয় থিম-যুদ্ধ সাউতানচকে
বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সাউতানচক: আলোকস্পর্শ থেকে স্বর্গপুরী, কালের বিবর্তন থেকে লক্ষ্মীর ঝাঁপি-কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় রকমারি থিমে সেজে উঠেছে সাউতানচক ও চকবহিচবেড়্যার বিগ বাজেটের পুজো মণ্ডপ। তমলুক ও নন্দকুমার থানার সীমানাবর্তী সাউতানচক গত কয়েকবছর ধরেই লক্ষ্মীপুজোর জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়ে গতবছর তমলুক-ময়না সড়ক তিন ঘণ্টা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ছিল। ডিস্ট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার থেকে অতিরিক্ত বাহিনী গিয়ে সড়ক ফাঁকা করেছিল। এবারও রকমারি থিমে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। শুধু মণ্ডপ নয়, ধান, চায়ের ভাঁড় দিয়ে তৈরি প্রতিমাও নজর কাড়বে বলে উদ্যোক্তাদের আশা। পুজো উপলক্ষ্যে এখানে মেলাও বসে। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা আসেন। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে পাঁচদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা চলে।
সাউতানচকের অদূরে ঠেকুয়াবাজার যাওয়ার রাস্তার ধারে নন্দকুমার ব্লকের চকবহিচবেড়্যায় টু হান্ড্রেড ক্লাব এবং হটবয় ক্লাবের প্রতিযোগিতা চলে। দর্শনার্থী টানার প্রতিযোগিতায় দুই ক্লাব এবার মণ্ডপ ও প্রতিমায় থিমের চমক এনেছে। টু হান্ড্রেড ক্লাবের থিম ‘কালের বিবর্তন’। আদিম মানব থেকে আধুনিক মানুষের নানা পর্যায় মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে। ইতিহাস থেকে আমরা এই বিবর্তনের শিক্ষালাভ করেছি। এখানকার উদ্যোক্তারা সেই ইতিহাসকে মণ্ডপে তুলে ধরেছেন। এছাড়াও এখানে চায়ের কাপ দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। পাঁচদিন ধরে ঠাসা অনুষ্ঠান। ক্লাবের সহকারী কোষাধ্যক্ষ প্রাণকৃষ্ণ বেরা বলেন, ১১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠান রয়েছে। পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসেছে। সন্ধ্যায় মিউজিক্যাল ড্যান্স ট্রুপ, অর্কেস্ট্রা, ছোটপর্দার নায়িকাদের অনুষ্ঠান থাকছে।
চক বহিচবেড়্যার আরেক ক্লাব হটবয়ের থিম ‘স্বর্গপুরী’। মণ্ডপের ভিতর একটা স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। দুর্যোগের কারণে মণ্ডপ তৈরির স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে। তারমধ্যেও শিল্পীরা কাজ করছেন। ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। এখানকার পুজো ১০ বছরে পড়ল। পুজো মণ্ডপের সামনে বিরাট মেলা বসেছে। টানা পাঁচদিন নানা অনুষ্ঠান রেখেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ক্লাব সম্পাদক টোটন দিণ্ডা বলেন, প্রতিবছর আমাদের এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় উপচে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। পাঁচদিন নানা স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে।
তমলুক-নন্দকুমারের সাউতানচক নেতাজি প্রাইমারি স্কুলমাঠে ১৯৮৯ সাল থেকে লক্ষ্মীপুজো করছে নবীন সংঘ। এবার এখানকার থিম ‘আলোকস্পর্শ’। মণ্ডপের ভিতর শৌখিন কাজ রয়েছে। তাতে আলোর রোশনাই মণ্ডপকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। স্কুল মাঠে মেলাও বসেছে। ক্লাব সম্পাদক কমলকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, তমলুক, নন্দকুমার এবং ময়না থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে সাউতানচকে। এই এলাকায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো প্রধান উৎসব। প্রত্যেক বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসেন। পাঁচদিন ধরে এই অনুষ্ঠান চলতে থাকে।
সাউতানচকে মুনলাইট ক্লাবের থিম ‘লক্ষ্মীর ঝাঁপি’। ঠেকুয়াবাজার যাওয়ার রাস্তার ধারে সুসজ্জিত থিম তৈরি করা হয়েছে। এবার পুজো ২৮ বছরে পড়ল। পুজো কমিটির ক্যাশিয়ার আদিত্য মিদ্যা জানান, দুর্যোগের কারণে মণ্ডপের শেষ মুহূর্তের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সাউতানচক বাজার ব্যবসায়ীবৃন্দের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ২২ বছরে পড়ল। এখানকার থিম ছত্রছায়া। কমিটির সম্পাদক শুকদেব মিদ্যা বলেন, মণ্ডপে কাল্পনিক একটা পরিবেশ তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। পুজো মণ্ডপের সামনে মেলা বসে। সেখানেও ভালো ভিড় হয়।
নন্দকুমারের সাউতানচকে লক্ষ্মী পুজোর থিমের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র