নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ঠিক যেন বাংলা সিরিয়ালের গল্প। মায়ের গয়না লুট করতে মেয়ে এমন অভিনব গল্প ফেঁদেছিল যে পুলিশও ঘোল খেয়ে যায়। চুরির গল্প ফেঁদে মেয়ে নিজেই সোনার গয়না আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। যদিও শেষ রক্ষা হল না। টানা জেরায় ওই মহিলা ভেঙে পড়ে। এরপরই পুলিশ তার কাছ থেকে মায়ের ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকার গয়না উদ্ধার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার গোরাবাজারের বাসিন্দা গায়ত্রী বসু বহরমপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। সে পুলিশকে জানায়, গোরাবাজারে একটি ব্যাঙ্কের লকার থেকে সোনার গয়না নিয়ে টোটোয় ফিরছিল। তার সঙ্গে টোটোয় ছিল আরও দুই যাত্রী। জজ কোর্ট মোড়ের কাছে দুই যাত্রী ও টোটো চালক মাদক জাতীয় কিছু স্প্রে করে দিয়ে তাকে অচৈতন্য করে। তারপর তার কাছে থাকা সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। পুজোর পরেই এমন ঘটনার কথা শুনে তড়িঘড়ি এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করা হয়। জজ কোর্ট মোড় এলাকার বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করা হয়। দেখা যায়, অভিযোগকারীর বক্তব্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে কোনওভাবেই মিলছে না। শনিবার ফের ওই মহিলাকে ডেকে পাঠান বহরমপুর থানার আইসি। বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ওই মহিলা স্বীকার করে যে, এই পুরো গয়নাই তার মায়ের। ভাইদের যাতে ভাগ দিতে না হয়, তাই পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের গল্প তৈরি করেছিল। যা শুনে পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা একেবারে আকাশ থেকে পড়েন।
রবিবার বহরমপুর থানায় সাংবাদিক বৈঠকে ডিএসপি(ডি অ্যান্ড টি) সুশান্ত রাজবংশী বলেন, গোরাবাজারের বাসিন্দা গায়ত্রী বসু বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে সে লেখে, গোরাবাজারে লকার থেকে সোনার গয়না নিয়ে টোটোয় ফিরছিল। তার সঙ্গে টোটোয় ছিল আরও দুই যাত্রী। কোর্ট চত্বরের কাছে দুই যাত্রী এবং টোটো চালক নেশা জাতীয় কিছু ছিটিয়ে দিয়ে সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। এফআইআর দায়ের করা হয়। সিসি ক্যামেরা দেখে তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে কোনও সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। টোটো চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি, এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, অভিযোগকারীকে থানায় ডাকা হলে সে প্রথমে আসেনি। পরে সে থানায় এলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, গয়না যাতে ভাইদের ভাগ দিতে না হয়, তাই পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের গল্প ফেঁদেছিল। অভিযোগকারীর বাড়িতে অভিযান ও তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে ৯৬০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা।
বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য ওই মহিলাকে যখন থানায় ডাকা হয়েছিল, সে আসতে চাইছিলেন না। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। এদিকে টোটো চালকের বয়ানের সঙ্গে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের মিল পাই। মহিলাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সে সবকিছু স্বীকার করে। তার মা কয়েকদিন আগে সোনার অলঙ্কারগুলি তাকে নিরাপদে রাখতে দিয়েছিল। গয়নাগুলি মাকে ফেরত না দেওয়ার জন্যই এই মিথ্যা গল্প বলা হয়েছে। আগামী দিনে আইনি পদ্ধতি অনুসারে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।