সংবাদদাতা, কাটোয়া: এ-যেন ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। কাটোয়ায় পুরুষদের পাশাপাশি বহু মহিলাই সমান পারদর্শীতায় ছাঁচের বিভিন্ন ছোট মূর্তি তৈরি করে সংসার চালান। তাঁদের তৈরি ছাঁচের লক্ষ্মী দেদার বিক্রি হচ্ছে। মহিলাদের তৈরি লক্ষ্মী এবার বিহার, মুম্বই এমনকী জার্মানি পাড়ি দিয়েছে। কয়েক হাজার লক্ষ্মীমূর্তি বিভিন্ন জেলার বাজারে সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। বিক্রি বাড়ায় তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে।
কাটোয়া শহরের পানুহাট বসন্তপল্লি এলাকার বধূ লক্ষ্মী পাল, তাঁর মেয়ে মৌলি পাল, শাশুড়ি অনিতা পালরা বাড়িতেই ছাঁচের মূর্তি তৈরি করেন। আর ছাঁচের লক্ষ্মী-গণেশ তৈরি করেই সংসারের হাল ফিরেছে বধূদের। একটা সময় লক্ষ্মী পালের সংসারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। স্বামী ভোলানাথবাবু আগে সোনা-রূপার দোকানে কাজ করতেন। তাঁর বাবা শীতল পাল মাটির ভাঁড়, কিছু প্রতিমা তৈরি করে কোনওরকমে অভাবের সংসার চালাতেন। পুজোপার্বণ এলেই পাল পরিবারে পয়সার অভাব যেন বড় হয়ে দেখা দিত। এরপর শ্বশুরের দেখাদেখি প্রথমে মাটির ভাঁড় তৈরি করতেন বউমা লক্ষ্মী। তারপর বিভিন্ন ছাঁচের প্রতিমা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। তাতে অন্তত তাঁদের দু’-পয়সা আয় হতো।
এরপর একদিন লক্ষ্মীদেবী নিজেই কোমর বেঁধে ছাঁচের লক্ষ্মীমূর্তি তৈরি করতে শুরু করেন। আর সেই লক্ষ্মীমূর্তির চাহিদা হু হু করে বাড়তে থাকে। সেই থেকে এখনও নিজেই সংসার সামলে বাড়িতে কয়েক হাজার ছাঁচের লক্ষ্মী তৈরি করেন। মূর্তি তৈরি থেকে তাতে রং করা, চোখ আঁকা, ডাকের সাজ পড়ানো সবই নিজে হাতে করেন লক্ষ্মীদেবী। এবার ওই বধূর হাতের তৈরি লক্ষ্মী প্রতিমা কাটোয়া ছাড়াও পাড়ি দিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়াও মুম্বই, বিহারেও গিয়েছে।
লক্ষ্মীদেবী বলেন, আমি ছোট থেকেই কালনা শহরের পালপাড়ায় বড় হয়েছি। তাই মাটির প্রতিমা তৈরি করা আমার রক্তে আছে। শ্বশুরের দেখাদেখি নিজেই প্রতিমা তৈরি করতে শুরু করি। অভাবের সংসারে দু’টো পয়সা আয়ের জন্যই মাটির প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করি। এবারও আমার তৈরি লক্ষ্মীপ্রতিমা অন্যান্য জেলায় গিয়েছে। তাঁর স্বামী ভোলানাথ পাল বলেন, এবারে আবহাওয়ার কারণে প্রতিমা তৈরি কমে গিয়েছে।
এবছর ছাঁচের ছোট প্রতিমার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বড় প্রতিমার তুলনায় ছাঁচের তৈরি ছোট লক্ষ্মীমূর্তি সকলে বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। লক্ষ্মীদেবীরা বাড়িতে সেই ছাঁচের মূর্তি তৈরি করছেন। আরেক মহিলা শিল্পী সুমিত্রা পাল বলছেন, কাটোয়ার পুরুষ মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের মতো বহু মহিলাও ছাঁচের মূর্তি তৈরি করেন। এবারে বাজারে চাহিদা বেড়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন অনেকেই স্বনির্ভর হচ্ছেন। • নিজস্ব চিত্র