• নিম্নচাপের রাতভর বৃষ্টির জের, বিপাকে হলদিয়ার লক্ষ্মীগ্রামের পুজো উদ্যোক্তারা
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: নিম্নচাপের বৃষ্টি ও দুর্যোগে বিপাকে পড়েছেন হলদিয়ার লক্ষ্মীগ্রামের পুজো উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে থিমের মণ্ডপগুলি নিয়ে উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। রাতভর বৃষ্টিতে প্রায় সব পুজো প্রাঙ্গণেই জল থই থই করছে। রবিবার দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই জোরকদমে চলছে মণ্ডপ নির্মাণের কাজ। আজ, সোমবার কোজাগরী পূর্ণিমায় হলদিয়ার ‘লক্ষ্মীগ্রাম’  কিসমত শিবরামনগর ও চাউলখোলায় শুরু হচ্ছে শারদ লক্ষ্মীর বন্দনা। চারদিনের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় মেতে উঠবেন হলদিয়া শিল্পশহর লাগোয়া দুই গ্রামের মানুষ। দুর্গোৎসবের মতো লক্ষ্মীগ্রামের মানুষ ধুমধাম করে কোজাগরী উৎসবে মেতে ওঠেন এই সময়। বৃষ্টি বিপর্যয়ে খানিকটা বিপাকে পড়লেও হার মানতে নারাজ উদ্যোক্তারা। দুর্যোগের মধ্যেই থিমের চমকে একে অপরকে টেক্কা দিতে তৈরি তাঁরা। দুই গ্রামে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮-১০টি পুজো হয়। এখানে লক্ষ্মীপুজোয় থিমের পুজো বনাম সাবেকিয়ানার লড়াই চলে। স্বাধীনতার কিছুদিন পর থেকে আর্থিকভাবে সচ্ছ্বল ওই এলাকার বিভিন্ন ক্লাবে ধুমধাম করে সর্বজনীন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়। হলদিয়া বন্দর ও শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার পর থেকে কৃষির পাশাপাশি মানুষের কাজের সংস্থান হয়। লক্ষ্মীলাভের সঙ্গে লক্ষ্মীপুজোর জাঁকজমকও বাড়তে শুরু করে। গত পঞ্চাশ বছরে সেই পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে হলদিয়াজুড়ে। হলদিয়ার লক্ষ্মীগ্রামে লক্ষ্মীপুজোর মেলা ও অনুষ্ঠান দেখতে আসেন দূরদূরান্তের মানুষও। বিগ বাজেটের লক্ষ্মীপুজোর বাহারি মণ্ডপ ও আলোকসজ্জায় হার মানে শহরের পুজোও। 

    এবার থিমের মণ্ডপে চমকে দেবে চাউলখোলা অগ্ৰণী সংঘ। ৬৯তম বর্ষে ওই ক্লাবের পুজোর থিম ‹লক্ষ্মী এল বাংলার ঘরে ঘরে›। ধন সম্পদের গোলার আদলে ৪০ ফুট উঁচু মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। দূষণ রোধে চারাগাছ বিতরণ করা হবে। পুজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অচিন্ত্য মান্না ও হরিপদ কর বলেন, প্রায় ৬ লক্ষ টাকা বাজেটের পুজোয় গ্রাম বাংলার মহিলাদের হাতের তৈরি বিভিন্ন কারুকার্য দিয়ে প্রতিমা সাজানো হয়েছে। কিসমত শিবরামনগর সমন্বয় ক্লাবের ৬৯তম বর্ষে এবারের থিম ‹প্রকৃতি›। গাছ, পাখি, ফুলের শোভায় মুখরিত হবে পুজো মণ্ডপ। ময়ূরের বিশাল পেখমের মতো মণ্ডপ হয়েছে। মণ্ডপের মধ্যে শুকনো গাছের ডালপালা ব্যবহার করে আলোর কারসাজিতে প্রকৃতির আদল দেওয়া হয়েছে। পুজোয় রয়েছে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিনয়ী সংঘের পুজোও এবার ৬৯তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। পুজোর থিম ‹আমি সেই মেয়ে›। বাল্যবিবাহ নিয়ে মণ্ডপে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখানে আঠারো হাতের মহালক্ষ্মী পূজিত হন। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অভিজিৎ ঘোড়াই ও সত্যজিৎ ঘোড়াই বলেন, ৫ লক্ষ টাকা বাজেটের পুজোয় বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আলপনা প্রতিযোগিতা রয়েছে। ৪৯তম বর্ষে কিসমত শিবরামনগর ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি সংঘের পুজোর থিম, ‘মোবাইল নয়, বই থাকুক’। কয়েকশো নানা ধরনের বই দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ সকলের মধ্যে মোবাইল আসক্তি কমিয়ে বই পড়ার অভ্যেস বাড়াতে এই ভাবনায় মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সোমবার পুজা মণ্ডপ উদ্বোধন করবেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পুর্ণেন্দু কুমার মাজি। পুজো কমিটির সম্পাদক ভাস্বৎ সুন্দর বেরা বলেন, পুজোর খরচ বাঁচিয়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক শিশুকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। সাইকেলে অমরনাথ ও কেদারনাথ ভ্রমণকারী সুরজিৎ দাসকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পুজোর কয়েকদিন ডিজে বক্স নিয়ন্ত্রণে কড়া পুলিসি নজরদারি থাকবে।  হলদিয়ার লক্ষ্মীগ্রামে থিমের লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ।
  • Link to this news (বর্তমান)