নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: অফিসে মিটিং আছে বলে বিজয়া দশমীর দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ অবধি অফিসে যাননি! একাদশীর দিন থেকে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। তাই থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেছিল পরিবার। ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে তাঁর খোঁজ মেলে নিউটাউনের গেস্ট হাউসে। কিন্তু, অনেক ডাকাডাকির পরেও কোনও সাড়া মেলেনি। শেষমেশ গেস্ট হাউসের দরজা ভেঙে ভিতর থেকে উদ্ধার হয় আইটি কর্মী ওই যুবকের মৃতদেহ! দেহের পাশে মিলেছে ঘুমের ওষুধ ও কীটনাশকের নমুনা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অনুমান। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
মৃতের নাম চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (৩৪)। বারাকপুর কমিশনারেটের অন্তর্গত নোয়াপাড়া থানার শ্যামনগরে তাঁর বাড়ি। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে কাজ করতেন তিনি। তরতাজা এই যুবকের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই চন্দ্রনাথ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। চন্দ্রনাথের বাবা চঞ্চল মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ছেলে গত বৃহস্পতিবার দশমীর দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল অফিসে জরুরি মিটিং আছে বলে। কিন্তু, পরে ওর অফিস থেকে ফোন আসায় জানতে পারি চন্দ্রনাথ ওইদিন কাজে যায়নি। ওইদিন রাতেও ওর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ হয়েছিল। কিন্তু, শুক্রবার অর্থাৎ, একাদশীর দিন সকাল থেকে ওকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। এরপরই স্থানীয় নোয়াপাড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।’ চঞ্চলবাবুর দাবি, ‘বাড়িতে কোনও সমস্যা নেই। তবে, অফিসে কাজের চাপ ছিল। এখন ছেলে আত্মহত্যা করেছে, নাকি ওকে কেউ খুন করেছে, সেটা পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করুক।’
বিধাননগর কমিশনারেটের এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, মানসিক অবসাদের জন্য এর আগে চন্দ্রনাথ রিহ্যাবে গিয়েছিলেন। বাড়িতে তিনি কাজের অত্যধিক চাপের কথা জানিয়েছিলেন। পরিবারের লোকজনদের সামনেই দরজা ভেঙে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। পাশে ঘুমের ওষুধের নমুনা এবং কীটনাশকের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। ওই ওষুধ এবং কীটনাশক নিয়েই তিনি গেস্ট হাউসে ঢুকেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই গোটা ঘটনার কিনারা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, একাদশীর দিন নোয়াপাড়া থানায় নিখোঁজের ডায়েরি হওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করা হয়। তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে, নিউটাউনের একটি গেস্ট হাউসে তাঁর ফোন রয়েছে। এরপর নোয়াপাড়া থেকে বিধাননগর কমিশনারেটের নিউটাউন থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরিবারের সদস্যরাও নিউটাউনে পৌঁছন। শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিউটাউন থানার পুলিস গৌরাঙ্গনগর এলাকার ওই গেস্ট হাউসে যায়। যে রুমে তিনি ছিলেন, সেই রুম ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। এরপর পুলিশ দরজা ভাঙে। ভিতর থেকে উদ্ধার হয় চন্দ্রনাথের মৃতদেহ। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। দেহে পচন ধরতে শুরু করেছিল। তাতে করে পুলিশের অনুমান, একাদশীর দিনই হয়তো তাঁর মৃত্যু হয়েছে।