• বরানগরে ডাকাতি-খুনে পরিচিত কেউ? ধোঁয়াশা, দুই দুষ্কৃতী জুতো খুলে দোকানে কেন
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: জুতো পরে দোকানে ঢোকা পছন্দ করতেন না বরানগরের পাইকারি স্বর্ণ ব্যবসায়ী শংকর জানা। তাই ক্রেতারা জুতো খুলে তাঁর দোকানে ঢুকতেন। শনিবার দুপুরে দোকানে ডাকাতি এবং শংকরবাবুকে খুনের পর এই সাধারণ বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, খুন ও ডাকাতিতে জড়িত দুষ্কৃতীদের মধ্যে দু’জন শনিবার জুতো খুলেই ঢুকেছিল দোকানে। দোকানের রীতি সম্পর্কে আগে থেকে ওয়াকিবহাল না থাকলে এটা কীভাবে সম্ভব? এই সূত্রেই তদন্তকারীরা মনে করছেন, শংকরবাবুর পূর্ব পরিচিত কোনও ব্যবসায়ী বা স্থানীয় টিপার যুক্ত রয়েছে এই ঘটনায়। মৃত ব্যবসায়ীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে ১৫ কেজি সোনার গয়না লুট হয়েছে, যার বাজারদর ১৭ কোটি টাকার বেশি। বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘দুষ্কৃতীরা শংকরবাবুর মোবাইল ফোনটিও নিয়ে গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’

    শনিবার দুপুরে বরানগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে এই ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটে। ২০ মিনিটের মধ্যে ‘অপারেশন’ শেষ করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। শংকরবাবুর ছেলে শান্তনু জানা বাবার সঙ্গেই ব্যবসা সামলান। পুজোয় তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন। এই ঘটনায় বরানগরের সোনাপট্টির ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির তরফে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার ও লুট হওয়া সোনা উদ্ধারের দাবি জানানো হয় রবিবার। দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ।

    ‘অপারেশন’-এর ধরনও পুলিশকে ধন্দে ফেলেছে। তারা লঙ্কার গুঁড়ো নিয়ে দোকানে ঢুকেছিল। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র বা অন্য কোনও অস্ত্র ছিল না। শংকরবাবুর মাথায় ও মুখে তারা আঘাত করে দোকানে থাকা লোহার লম্বা একটি দণ্ড দিয়ে। পাশাপাশি, দুই দুষ্কৃতীর জুতো খুলে ভিতরে ঢোকার বিষয়টি রহস্য বাড়িয়েছে। ‘কাজ’ শেষ করে ওই দুই দুষ্কৃতী সোনা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে কালীচরণ ঘোষ রোডের দিকে বেরিয়ে যায়। অন্য তিন যুবক উল্টো দিকে দৌড়ে গিয়ে অলিগলির মধ্যে মিশে যায়। এরপর তারা ৩০এ বাসস্ট্যান্ড হয়ে বেদিয়াপাড়ার দিক দিয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে গিয়েছে, নাকি দমদম স্টেশন থেকে ট্রেনে বা বাসে দমদম রোড ধরে উধাও হয়েছে, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

    আরও একটি বিষয় নজরে এসেছে তদন্তকারীদের। বেলা ৩টে নাগাদ সোনাপট্টির প্রায় ৯৮ ভাগ দোকান বন্ধ থাকে। পুজোর সময় ছেলে দিল্লি যাওয়ায় দোকানে শংকরবাবু একাই ছিলেন। পাশের সোনা কাটাইয়ের দোকান বেলা আড়াইটে থেকে সাড়ে তিনটে পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এসব কারণে তদন্তকারীরা নিশ্চিত, দুষ্কৃতীরা আগেই একাধিকবার এলাকা রেকি করেছে। এমনও হতে পারে, পেশাদার কোনও গ্যাং পুলিশের চোখে ধুলো দিতে ‘সিগনেচার স্টাইল’ বদলে ‘অ্যামেচার স্টাইলে’ অপারেশন চালিয়েছে। কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ ও বরানগর থানার কয়েকটি টিম দুষ্কৃতীদের খোঁজে বাংলার পাশাপাশি পড়শি রাজ্যেও তল্লাশি চালাচ্ছে।

    মৃতের ছেলে শান্তনুবাবু বলেন, ‘কারা কী উদ্দেশে এই ঘটনা ঘটালো, কিছুই বুঝতে পারছি না।’ সর্বভারতীয় জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের কো-অর্ডিনেটর এস এস আলম বলেন, ‘বরানগরে এক হাজারের বেশি ছোট-বড় দোকানে লক্ষাধিক স্বর্ণশিল্পী কাজ করেন। আমরা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি পুলিশের কাছে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)