স্বার্ণিক দাস, কলকাতা; ঠাকুরপুকুর মাঝিপাড়ায় মস্ত ফ্ল্যাটবাড়ির নীচে ‘হ্যানিম্যান ফার্মেসি’। সেখানেই নিয়মিত রোগী দেখেন এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। ভিজিট ২৫০ টাকা। রোগী এলেই ফার্মেসির স্টাফ তাঁর দিকে একটি ডায়েরি এগিয়ে দেন। ডায়েরির পাতাতেই রোগীর নাম, পরিচয় সহ ওষুধ লিখে রাখেন চিকিৎসক। কোনও প্রেসক্রিপশন প্যাড নেই। রোগী প্রেসক্রিপশন চাইলে তিনি জবাব দেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে হোমিওপ্যাথি পাশ করেছি। তাই এখানে প্রেসক্রিপশন দিই না। ডায়েরির পাতার ছবি তুলে নিয়ে যান।’
দিনের পর দিন ঠাকুরপুকুর পঞ্চাননতলায় এভাবেই ‘পরিষেবা’ দিচ্ছেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শচীন হালদার! পসার ভালোই। কিন্তু এই চিকিৎসকের কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই বলে অভিযোগ। তাহলে দেদার রোগী দেখছেন কীভাবে? এই প্রশ্ন তুলে এক রোগী ঠাকুরপুকুর থানায় শচীন হালদার ও সংশ্লিষ্ট ফার্মেসির নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, শীঘ্রই অভিযুক্তকে থানায় ডেকে পাঠানো হবে। পাশাপাশি, বিষয়টি ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) নজরে আনতে তাদের চিঠি দিচ্ছে পুলিশ।
অভিযোগকারী পুলিশকে জানিয়েছেন, কোমরে ব্যথা নিয়ে তিনি ওই চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়েছিলেন। সেখানে ঢুকতেই ফার্মেসির এক মহিলা কর্মচারী একটি ডায়েরি এগিয়ে দেন শচীনবাবুর দিকে। ডায়েরির পাতায় ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে রোগীর নাম, বয়স, রোগের ধরন সহ অন্যান্য মেডিকেল বৈশিষ্ট্যগুলি লেখেন তিনি। সেখানেই ওষুধের নাম লিখে মহিলা কর্মচারীকে ডায়েরির পাতা দেখে ওষুধ দিয়ে দিতে বলেন। রোগী প্রেসক্রিপশন চেয়েও পাননি। পুলিশের কাছে অভিযোগকারীর দাবি, চিকিৎসক তাঁকে জানান, তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে ডাক্তারি পাশ করেছেন। ভারতে কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই তাঁর। তাতেই সন্দেহ হয় ওই রোগীর। চিকিৎসকের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে আসেন ফার্মেসির মালিক বাসুদেব। অভিযোগকারীর দাবি, বিপাকে পড়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন মালিক। দাবি করেন, শচীন নাকি চিকিৎসকই নন, দোকানের কর্মচারী! তাহলে তিনি কীভাবে ওষুধ লিখছেন? তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বাসুদেব। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কীভাবে ঠাকুরপুকুর এলাকায় রমরমিয়ে চলছে ‘চিকিৎসা’? শচীন হালদার বলেন, ‘বাংলাদেশে থেকে পাশ করেছি। কিন্তু, রেজিস্ট্রেশন নম্বর আমার মনে নেই। এলাকার কোনও চিকিৎসকই প্রেসক্রিপশন দেন না বলে আমিও দিই না।’ স্বভাবতই শচীনবাবু আদৌ এদেশের নাগরিক কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হলে তাঁর দাবি, ‘আমি বাধ্য নই।’ আর ফার্মেসি মালিক বাসুদেববাবুর আর্জি, ‘বিষয়টি কাউকে জানাবেন না। যদি কিছু প্রয়োজন হয়, বলবেন।’ তাঁর এই বক্তব্য আদতে যে ফার্মেসির নামে বেআইনি কাণ্ডকারখানার প্রমাণ, বলাই বাহুল্য।