প্রসেনজিত্ মালাকার: তিথি অনুসারে আজ সোমবার, আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশী তিথি, তারাপীঠে আজ পালিত হচ্ছে মা তারার আবির্ভাব দিবস। এদিন ভোররাত থেকেই তারাপীঠ মন্দির ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় ভক্তদের ঢল নামে জনসমুদ্রে। কথিত আছে, এই তিথিতেই দেবীর শিলামূর্তি প্রথম মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন জয়দত্ত সওদাগর। তাই এই দিনটিকে মা তারার আবির্ভাব তিথি হিসেবেই মানা হয়।
ভোর তিনটে নাগাদ ঘুম ভাঙিয়ে মূল গর্ভগৃহ থেকে দেবীকে বের করে আনা হয়। স্নানপর্বের পর রাজরাজেশ্বরী সাজে সেজে ওঠেন মা তারা। এরপর শুরু হয় মঙ্গল আরতি ও বিশেষ পূজা-অর্চনা। দিনভর চলে ভক্তদের ভিড়, ঘণ্টাধ্বনি, ধূপধুনোর গন্ধে মুখরিত হয় গোটা তারাপীঠ। এদিন দেবীকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিরাম মঞ্চে পশ্চিমমুখী করে বসানো হয়। কথিত আছে, এই দিন দেবী পশ্চিমমুখী হয়ে বসেন কারণ সেই দিকেই রয়েছেন তাঁর বোন মৌলাক্ষী মা (ঝাড়খণ্ডের মুলুটি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত)। এই দিনই দেবী তারার সঙ্গে তাঁর বোনের 'দর্শন' হয় বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা।
আবির্ভাব তিথিতে মা তারাকে সারাদিন দেওয়া হয় বিশেষ পুজো ও ভোগ। এই দিনে দেবী সারাদিন অন্নভোগ গ্রহণ করেন না — বরং ফল, মিষ্টি ও শীতল ভোগে তাঁকে আরাধনা করা হয়। সন্ধ্যারতি শেষে দেবীকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে অন্নভোগ তথা মহাভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, মাছ, বলির মাংস ও পায়েস।
পুরাণ মতে, জয়দত্ত নামে এক বণিক তাঁর মৃত পুত্রকে তারা মায়ের আশীর্বাদে পুনর্জীবিত করার পর থেকেই তারাপীঠে মা তারার আরাধনা শুরু হয়। সেই অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী ছিল যে পুকুর, সেটিই আজও ‘জীবিত কুণ্ড’ নামে পূজিত। আজ সেই ঐতিহাসিক দিনে, মন্দির প্রাঙ্গণে তিলধারণের জায়গা নেই। সকাল থেকেই চলছে ভক্তদের অবিরাম আগমন, কেউ মায়ের দর্শনে, কেউ মানত রাখতে, আবার কেউ কেবলমাত্র মা তারাকে কাছ থেকে একঝলক দেখার আশায়।
দূরদূরান্ত থেকে আগত ভক্তদের জন্য মন্দির চত্বরের নিরাপত্তা ও ভোগ-বিতরণের বিশেষ ব্যবস্থা করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। তারা মায়ের আবির্ভাব তিথিতে এভাবেই প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে গোটা তারাপীঠ — “জয় তারা” ধ্বনিতে মুখরিত হয় বাতাস।