আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাদাখের সমাজকর্মী ও শিক্ষা সংস্কারক সোনম ওয়াংচুকের জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) অধীনে আটক হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের উদ্দেশে তীব্র প্রশ্ন তোলে। আদালত জানতে চায়, কেন ওয়াংচুকের স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমোকে তার স্বামীর আটকের কারণ আগাম জানানো হয়নি। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকার, জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন এবং রাজস্থান সরকারের কাছে নোটিস জারি করেছে। গীতাঞ্জলি আদালতে জানান, এখনো পর্যন্ত তাঁকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিচারপতি অরবিন্দ কুমার এবং বিচারপতি এন. ভি. আঞ্জারিয়ার বেঞ্চ এই নোটিস জারি করে জানিয়েছে, মামলাটি আগামী মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে। গীতাঞ্জলি আংমো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি হেবিয়াস করপাস পিটিশন দায়ের করেছেন, যাতে সোনম ওয়াংচুকের অবিলম্বে মুক্তির আবেদন করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওয়াংচুক বর্তমানে যোধপুর কেন্দ্রীয় জেলে আটক রয়েছেন, এবং আটক করার কোনো ভিত্তি বা কারণ তাঁর বা তাঁর স্ত্রীর কাছে জানানো হয়নি। মামলার উত্তরদাতা হিসেবে কেন্দ্র সরকার, লাদাখ প্রশাসন এবং জোধপুর কেন্দ্রীয় জেলের সুপারিনটেনডেন্টকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আবেদনকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল যুক্তি দেন যে, আটক করার ভিত্তি হিসেবে যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা স্ত্রী গীতাঞ্জলির কাছে সরবরাহ করা উচিত। অপরদিকে, কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা জানান যে, আটক ব্যক্তির (ওয়াংচুকের) কাছেই ওই কারণগুলি প্রদান করা হয়েছে, এবং আইনে কোথাও উল্লেখ নেই যে তা স্ত্রীকেও জানাতে হবে। বিচারপতি কুমার এ বিষয়ে বলেন, “এই পর্যায়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না।” তবে তিনি সলিসিটার জেনারেলকে জিজ্ঞাসা করেন, গীতাঞ্জলিকে কারণ জানাতে বাধা কোথায়? জবাবে মেহতা জানান, আইনি দৃষ্টিতে এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং আবেদনকারী নতুন একটি ভিত্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
সিব্বল পাল্টা যুক্তি দেন, কারণের অনুলিপি না থাকলে আটকের আদেশ চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্ট করেন যে, স্ত্রীকে কারণ না দেওয়া আটক আদেশ চ্যালেঞ্জ করার ভিত্তি নয়, বরং কারণগুলি জানলে আটক আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। এই বক্তব্যের পর সলিসিটার জেনারেল জানান, তিনি গীতাঞ্জলিকে আটক আদেশের কারণ সরবরাহের বিষয়ে “ভাববেন”।
সিব্বল আদালতের কাছে আরও অনুরোধ করেন, সোনম ওয়াংচুকের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া হোক এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা হোক। জবাবে তুষার মেহতা জানান, চিকিৎসা পরীক্ষার সময় ওয়াংচুক নিজেই বলেছেন তিনি কোনো ওষুধ গ্রহণ করছেন না। তবে প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা বা ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।
সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতির বিষয়ে বিচারপতি কুমার জানতে চান, গীতাঞ্জলি কি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আবেদন করেছেন? সিব্বল জানান, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়নি। বিচারপতি কুমার বলেন, “প্রথমে অনুরোধ করুন, যদি তা প্রত্যাখ্যাত হয়, তারপর আদালতে আসুন।”
এই সময় সলিসিটার জেনারেল অভিযোগ করেন যে আবেদনকারী পক্ষ এই ইস্যুকে “আবেগপ্রবণ পরিবেশ” তৈরির জন্য ব্যবহার করছেন। তাঁর ভাষায়, “এটা পুরোপুরি মিডিয়ার জন্য করা হচ্ছে, যেন দেখানো যায় তিনি ওষুধ এবং স্ত্রীর সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত। এটা শুধু জনমত তৈরির কৌশল।”
শুনানির সময় বিচারপতি কুমার আরও জানতে চান, কেন আবেদনকারী প্রথমে হাইকোর্টে যাননি। সিব্বল বলেন, আটকাদেশ যেহেতু কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে জারি হয়েছে, তাই কোন হাইকোর্টের এখতিয়ারে এটি পড়বে তা স্পষ্ট নয়। বিচারপতি কুমার এ বিষয়ে বলেন, “আপনি আমাদের পরবর্তী তারিখে এই প্রশ্নের উত্তর দিন।”
লাদাখে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক সংঘর্ষের পর সোনম ওয়াংচুককে এনএসএ আইনে আটক করা হয়েছে। তাঁর এই গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে লাদাখ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, কারণ ওয়াংচুক দীর্ঘদিন ধরে অঞ্চলের পরিবেশ, শিক্ষা ও সাংবিধানিক স্বশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। এখন সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানিতেই নির্ধারিত হবে তাঁর আটকাদেশের বৈধতা এবং পরিবারের অধিকারের প্রশ্নে আদালতের অবস্থান কী হবে।