ভোটার তালিকায় নাম তুলতে কোনোভাবেই গ্রাহ্য নয় আধার! বিতর্ক
আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা বা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision–SIR) প্রক্রিয়ায় আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না—এই প্রশ্নে রবিবার পাটনায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) সরাসরি উত্তর দিতে এড়িয়ে গেলেন। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে আধার আইন নিজেই বলছে, এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
তিনি আরও বলেন, একাধিক সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আধারকে বয়স বা বাসস্থানের প্রমাণ হিসেবেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সেই অর্থে, যেহেতু শুধুমাত্র ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ভারতীয় নাগরিকরাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তাই ভবিষ্যতে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে আধার একা যথেষ্ট হবে না।
তবে বিহারে চলমান SIR-এ আধার নম্বর চাওয়া হয়েছে কেন—এই প্রশ্নে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কমিশন সেখানে আধারকে নথিপত্রগুলির মধ্যে একটি হিসেবে গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় আধারকে অনুমোদিত নথির তালিকায় রাখা হয়েছে।
কিন্তু একই সঙ্গে তিনি আবার বলেন, আধার দেওয়া সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। এই মন্তব্যের ফলে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, কারণ তিনি স্পষ্ট করেননি—যাঁরা শুধুমাত্র আধার দিয়েছেন এবং অন্য কোনো নথি জমা দেননি, তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এর আগে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা একাধিক মামলায় আবেদনকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে বিহারের ৯০ শতাংশ মানুষ আধারধারী, অথচ ভূমি নথি, জন্ম সার্টিফিকেট বা পিতামাতার শিক্ষাগত নথি অনেকের কাছেই নেই। তাই আধারকেই দ্বাদশ নথি হিসেবে যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন তখন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত আধারকে যুক্ত করতেই হয়।
পাটনায় রবিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে বিরোধী দলগুলির সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, বিহারে আদালতের নির্দেশে আধার অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্যান্য রাজ্যে কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে আধারকে বাদ দিতে চাইছে।
একইসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বিহারের এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় কত বিদেশিকে শনাক্ত করা গেছে। তিনি সরাসরি উত্তর দেননি। বরং জানান, বিহারের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা যেখানে ৮.১৮ কোটি, সেখানে সংশোধিত ভোটার তালিকায় সংখ্যাটি নেমে এসেছে ৭.৪২ কোটিতে—অর্থাৎ ৬৮.৬৬ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। এই বাদ যাওয়া নামের মধ্যে মৃত্যু, স্থানান্তর, দ্বৈত নিবন্ধন এবং নাগরিক নন—এই চার শ্রেণিই অন্তর্ভুক্ত বলে তিনি জানান, কিন্তু নির্দিষ্ট বিভাজন দেননি।
সাংবাদিক বৈঠকে এক সাংবাদিক একটি উদাহরণ তুলে ধরেন—গয়া জেলার মোহনপুর গ্রাম, যা ঐতিহ্যগতভাবে একটি সম্পূর্ণ হিন্দু গ্রাম, সেখানে ১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ১০০ মুসলমানের নাম উঠে এসেছে। আপত্তি জানানো সত্ত্বেও চূড়ান্ত তালিকাতেও নামগুলি রয়ে গেছে। সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল—তাহলে এই পুনর্বিবরণ প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য কী? মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং সংশোধনের আশ্বাস দেন।
তিনি আরও জানান, মনোনয়ন জমার দশ দিন আগে পর্যন্ত যে কেউ স্থানীয় নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা জেলা শাসকের কাছে আপত্তি ও সংশোধনের আবেদন জানাতে পারবেন। রাজনৈতিক দলগুলিকেও চূড়ান্ত তালিকার কপি দেওয়া হয়েছে, যাতে বুথ লেভেল এজেন্টদের মাধ্যমে তারাও যাচাই করে আপত্তি তুলতে পারেন।
তবে রবিবারের সাংবাদিক সম্মেলনের পরও প্রশ্ন থেকেই গেছে—ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়ায় আধার কার্ডের ভূমিকা ঠিক কী, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।