• সোনম ওয়াংচুকের গ্রেপ্তারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র, ধমক সলিসিটর জেনারেলকে!
    আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাদাখে সাম্প্রতিক হিংসা, সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুককে। সেই মামলার সোমবার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুনানিতে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সোনম ওয়াংচুককে আটক করার সময় কেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি জে ওয়াংমোকে আগাম নোটিশ দেওয়া হয়নি, কেন তাঁকে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি?

    বিচারপতি অরবিন্দ কুমার এবং এনভি আঞ্জারিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ গীতাঞ্জলি ওয়াংমোর দায়ের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র, জম্মু ও কাশ্মীর এবং রাজস্থান সরকারকে নোটিশ জারি করেছে। গীতাঞ্জলি ওয়াংমো, বেঞ্চকে জানিয়েছেন যে ২৬শে সেপ্টেম্বর তাঁর স্বামী সোনম ওয়াংচুককে আটক করার পর থেকে তাঁকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। 

    বর্তমানে যোধপুর কারাগারে বন্দি সোনম ওয়াংচুক। তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী। ৩২ ধারার অধীনে দায়ের করা ওয়াংমোর আবেদনটি ওয়াংচুকের মুক্তির জন্য একটি হেবিয়াস কর্পাস আবেদন। তার আবেদনে, তিনি ২২ নং ধারার অধীনে সোনমের আটককে অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন। অভিযোগ করেছেন যে, তাঁকে বা তাঁর স্বামীকে আটকের কারণ জানানো হয়নি।

    শুনানির সময়, ওয়াংমোর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাঁর যুক্তি, আটকের নোটিশের একটি অনুলিপি দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে সোনম ওয়াংচুককে হিংসায় মদতদাতা ও জড়িত বলে চ্যালেঞ্জ করছে নিরাপত্তা সংস্তাগুলি?

    ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অবশ্য বলেন যে, আটকের কারণগুলি ইতিমধ্যেই ওয়াংচুককে জানানো হয়েছে এবং তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার পরে সোনমের ভাই তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

    এর জবাবে, সুপ্রিম কোর্ট সলিসিটর জেনারেলকে জিজ্ঞাসা করেছে যে- ওয়াংচুকের স্ত্রীকে আটকের কারণগুলি সরবরাহ করতে কর্তৃপক্ষকে কী বাধা দিয়েছে?বেঞ্চ জানিয়েছে, "এই আদালতের রায় অনুসারে (আটকের) কারণগুলি সরবরাহ করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের (আটকের নোটিশ) সরবরাহ করতে হবে... কেন তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে এটি আটকে রাখা হবে? তাকে কারণ জানানো হোক।" 

    পাল্টা সলিসিটর জেনারেল বলেন, আটক ব্যক্তির স্ত্রীকে কারণ প্রদানের কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি আরও বলেন যে, এই বিষয়টি উত্থাপন করে আবেদনকারী সরকারি পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর একটি নতুন ভিত্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। তুষার মেহতার কথায়, "আইন অনুসারে আটক ব্যক্তির সঙ্গে যা করা প্রয়োজন, সেটাই আমরা করেছি। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।  কোনও সমস্যা নেই, তবে আমরা চাই না যে তাঁরা আটকের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি নতুন ভিত্তি তৈরি করুক।" 

    কিন্তু আবেদনকারীর আইনজীবী কপিল সিব্বলের যুক্তি, পরিবার কোনও নথি পায়নি, এবং তাঁরা কেবল ইন্টারকমের মাধ্যমে কথা বলতে পেরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "ডিটেনশনের কারণ না জানলে উপযুক্তভাবে প্রতিরক্ষা পেশ করা যায় না।" তিনি ওয়াংমোকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার অনুমতি দিতে অনুরোধ করেন। উল্লেখ করে যে, তাঁকে এখনও পর্যন্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।

    তখন সলিসিটর জেনারেল বলেন যে, ওয়াংচুকের সঙ্গে দেখা করার জন্য ১২ জনের একটি তালিকা অনুমোদিত হয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেন যে- কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর দাবি "এটি একটি প্রচার তৈরির চেষ্টা"। মেহতা বলেন, "এটা কেবল মিডিয়া এবং ওই অঞ্চলে দেখানোর জন্য যে- তিনি চিকিৎসা এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এটি কেবল একটি আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করার জন্য করা হচ্ছে। কেউ তাঁর স্ত্রীকে দেখা করতে বাধা দেয়নি।"

    এবার সুপ্রিম কোর্ট যখন ওয়াংমোকে জিজ্ঞাসা করে যে, তিনি কখন তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেছিলেন? জবাবে সোনমের স্ত্রী উত্তর দেন যে, তিনি গত সপ্তাহে যোধপুর গিয়েছিলেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছিলেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁকে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। জবাবে, সলিসিটর জেনারেল ফের বলেন যে, এটি একটি "মিথ্যা প্রচার" তৈরি করার চেষ্টা। বেঞ্চ তখন তাঁকে সতর্ক করে বলে, "দয়া করে আবেগঘন যুক্তি দেবেন না।"

    আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, ধৃত পরিবেশকর্মী ওয়াংচুককে প্রয়োজনীয় ওষুধ, পোশাক এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, কারণ তাঁকে তার জিনিসপত্র ছাড়াই আটক করা হয়েছিল এবং আটকের আগে তিনি অনশন করছিলেন।

    শুনানির সময়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সিব্বলকে জিজ্ঞাসা করে যে, কেন ওয়াংমো হাইকোর্টের দ্বারস্থ হননি। 

    জবাবে সিনিয়র আইনজীবী বলেন, "কোন হাইকোর্ট? আটকের আদেশ কেন্দ্র জারি করেছে।" বেঞ্চ উত্তর দেয় যে তারা এই পর্যায়ে কোনও মন্তব্য করছে না এবং তাদের আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

    এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ অক্টোবর।

    উল্লেখ্য, লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে চারজন নিহত এবং ৯০ জন আহত হয়েছেন। 
  • Link to this news (আজকাল)