সনাতন ধর্মকে অপমান! প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়ার চেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীর কাণ্ডে চাঞ্চল্য
আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কোর্টরুমের মধ্যেই ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এদিন শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইকে লক্ষ্য করে উড়ে এল জুতো। সবচেয়ে বড় বিষয় জুতো ছোঁড়ার চেষ্টা করেন এক আইনজীবী। নিরাপত্তারক্ষীরা তৎক্ষণাৎ ওই আইনজীবীকে আটক করে আদালতের বাইরে নিয়ে যায়। বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওই আইনজীবী চিৎকার করে বলেন, ‘সনাতন ধর্মের অপমান ভারত সহ্য করবে না’। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং ২০১১ সাল থেকে প্র্যাকটিস করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোহিত পাণ্ডে জানান, ‘এই কাজটি সম্ভবত প্রধান বিচারপতির মন্দির সংক্রান্ত মন্তব্যের প্রতিবাদে করা হয়েছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা আইনজীবীদের মতে, এই ঘটনার পরেও প্রধান বিচারপতি গাভাই সম্পূর্ণ শান্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এসব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। এগুলো আমাকে প্রভাবিত করে না। শুনানি চালিয়ে যান।’
উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহ আগে মধ্যপ্রদেশের জাবারি মন্দিরে ক্ষতিগ্রস্ত বিষ্ণু মূর্তি পুনর্স্থাপনের আবেদন খারিজের সময় প্রধান বিচারপতি গাভাই আবেদনকারীকে বলেন, ‘এটা নিছক প্রচারের জন্য দায়ের করা মামলা। আপনি যদি ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত হন, তবে দেবতার কাছেই প্রার্থনা করুন।’ এই মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বহু আইনজীবীও প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেন। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে জানান, তাঁর মন্তব্য ‘ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে’ এবং তিনি ‘সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
উল্লেখ্য, বিষ্ণু মূর্তি পুনর্স্থাপনের আবেদনটিকে ‘জনস্বার্থ মামলা’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছিল যে বিষয়টি আদালতের নয়, ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) এক্তিয়ারভুক্ত। মামলা খারিজ করার সময় প্রধান বিচারপতি আবেদনকারীকে বলেন, ‘যান, ভগবানকে এখনই কিছু করতে বলুন। আপনি বলেছেন আপনি ভগবান বিষ্ণুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই এখনই গিয়ে প্রার্থনা করুন। এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং এএসআই-এর অনুমতি নেওয়া দরকার ইত্যাদি।’
রাকেশ দালাল নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, মুঘল আক্রমণের সময় মূর্তিটি বিকৃত হয়ে যায় এবং এটি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও মূর্তিটি সেই একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। আবেদনকারীর যুক্তি ছিল যে মূর্তিটি পুনরুদ্ধার করতে কেন্দ্র রাজি না হওয়ায় ভক্তদের পুজো দেওয়ার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। আবেদনে মন্দির সম্পর্কিত প্রতিবাদ, স্মারকলিপি এবং প্রচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার, এএসআই এমন কিছু করার অনুমতি দেবে কি দেবে না... অনেক বিষয় রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে, যদি আপনি শৈবধর্মের প্রতি বিরূপ না হন, তাহলে আপনি সেখানে গিয়ে পুজো করতে পারেন... সেখানে শিবের একটি খুব বড় লিঙ্গ রয়েছে, যা খাজুরাহোর বৃহত্তম লিঙ্গগুলির মধ্যে একটি।’