বন্যা-দুর্যোগে মৃতদের পরিবারগুলিকে পাঁচ লক্ষ টাকা, একজনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি, ঘোষণা মমতার ...
আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবিবার থেকেই পরিস্থিতির দিকে নজর ছিল। জানিয়েছিলেন, সোমবার তিনি পরস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যাবেন উত্তরবঙ্গে। যাওয়ার পথে বললেন, উত্তরবঙ্গে দুর্যোগে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকার চাকরি দেবে এবং প্রতি পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। মমতা সোমবার জানান, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অরূপ বিশ্বাস এবং গৌতম দেবকে পাঠিয়েছেন ধুপগুড়ি। মুখ্যসচিব এবং তিনি যাচ্ছেন হাসিমারা। মমতা বলেন, 'আমি এবং সিএস যাচ্ছি হাসিমারা। হাসিমারা থেকে আমরা যাব নাগরাকাটা, যতদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়।' মুখ্যমন্ত্রী হাসিমারা থেকে রাতে বাগডোগরা ফিরে, মঙ্গলবার ফের যাবেন মিরিকে।
এখনও পর্যন্ত তথ্য, দুর্যোগে উত্তরবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৩ জনের। ১৮ জন দার্জিলিং-মিরিক-কালিম্পংয়ের এবং নাগরাকাটার পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কালকে যাঁরা বন্যায় মারা গিয়েছেন, ২৩ জন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং প্রতি পরিবারের একজনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরিও দেওয়া হবে, যাতে পরিবারগুলি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়।' একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যদিও আমি জানি, জীবনের বিকল্প কক্ষনও টাকা হয় না। কিন্তু যে চলে যায়, তাঁর পরিবার থেকে যায়। পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য এটা আমাদের সামাজিক কর্তব্য।'
এদিন উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নাগরাকাটা-মিরিক। তিনি বলেন, 'উত্তরবঙ্গে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১২ ঘণ্টা টানা ৩০০ মিমি বেগে বৃষ্টি হয়েছে, ভূটানের জল, সিকিমের জল এসে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে।' এদিন তিনি প্রশ্ন করেন, বাংলা কতগুলি রাজ্যের জল সামলাবে? তিনি বলেন, 'বিহারে বৃষ্টি হলে জল চলে আসছে ফরাক্কা দিয়ে, উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি হলে জল চলে আসছে ফরাক্কা দিয়ে।' তারপরেই এদিন ফের একহাত নেন ডিভিসি-কে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এদিন ডিভিসি-র প্রতি তোপ দেগে বলেন, 'ডিভিসি তো ইচ্ছেমতো জল ছাড়ছে নিজেদের খালি করে দিয়ে। নিজেদের বাঁচাচ্ছে, ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাচ্ছে। আমি চাই ঝাড়খণ্ড বাঁচুক।' তারপরেই তিনি বলেন, '২০ বছর ধরে বলতে বলতে মুখ ব্যথা, মাইথন, ডিভিসি, পাঞ্চেত-জল ভরবার ক্যাপাসিটি নেই, তাহলে রাখার দরকার কী? ড্যাম না থাকলেই ভাল হত। জল প্রাকৃতিক নিয়মে আসত, প্রাকৃতিক নিয়মেই বেরিয়ে যেত। সবাই সমানভাবে ভাগাভাগি করতে পারত।' ডিভিসির-র জন্য দক্ষিণবঙ্গের ব্যাপক ভোগান্তির কথা এদিন ফের তিনি উল্লেখ করেন।
উত্তরবঙ্গের পর্যটকদের নিয়েও এদিন বড় বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'আমরা পর্যটকদের সব উদ্ধার করেছি। ডায়মন্ড হারবারের একজনের খোঁজ মেলেনি। তাছাড়া ৫০০ পর্যটকদের আজই নিয়ে আসা হচ্ছে নীচে এবং ৪৫টি ভলভো বাসে আটকে থাকা পর্যটকদের নিয়ে আসা হয়েছে। ২৫০জনকে রাখা হয়েছে শিলিগুড়িতে। যেসব পর্যটক আসতে পারেননি এখনও, হোটেলগুলিকে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত খরচা না নেওয়ার জন্য। প্রয়োজনে সরকার দেখবে। যতক্ষণ না পুলিশ তাঁদের সুরক্ষিতভাবে উদ্ধার করছে, ততক্ষণ হোটেল ছাড়া না করতে। ওদের নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদের।'
পর্যটকদের প্রসঙ্গে রবিবারেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'আমি বলেছি, পর্যটকরা যে যেখানে রয়েছেন, সেখানেই থাকবেন এখন। তার জন্য যেন অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া না দিতে হয়। হোটেল মালিক যেন অতিরিক্ত চাপ না দেন এই বিষয়ে, প্রশাসন নজর রাখবে সেদিকে। তাঁরা যেন তাড়াহুড়ো না করেন, আমরা সুরক্ষিতভাবে ফিরিয়ে আনব। এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সবাইকে ঠিকমতো পৌঁছে দেব।'
রাত থেকে সকাল, টানা বৃষ্টি। কলকাতার এক রাতের জলযন্ত্রণার ছবি যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ফিরেছিল উত্তরবঙ্গে। ভারী বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গ একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়। জানা গিয়েছে, ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০০ মিমি-র বেশি। একাধিক জায়গায় ধস, ভেঙে পড়েছে সেতু, কোথাও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগের একমাত্র পথ। আটকে পর্যটকরা। আতঙ্ক ব্যাপক। তবে রবিবারের ব্যাপক আতঙ্ক ধীরে ধীরে কেটে, সোমবার থেকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাহাড়।