• পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত বেড়ে ২৩
    আজকাল | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দার্জিলিংয়ের কুয়াশাচ্ছন্ন শান্ত পাহাড় রবিবার, ৫ অক্টোবর হঠাৎ ভয়াবহ বিপর্যয়ে কেঁপে উঠল। টানা মুষলধারে বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢাল ধসে পড়ায় ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটে দার্জিলিং ও প্রতিবেশী জলপাইগুড়ি জেলায়। সরকারি হিসাবে, এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলের সবচেয়ে মর্মান্তিক বিপর্যয়গুলির একটি বলে মনে করা হচ্ছে।

    অবিরাম বর্ষণে পাহাড়ের ঢাল গলে গিয়ে বহু ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, রাস্তা ভরাট হয়ে গেছে ধ্বংসস্তূপে, যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র দার্জিলিং এখন বিধ্বস্ত ধ্বংসভূমিতে পরিণত হয়েছে। শতাধিক পর্যটক বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়েছেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

    জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে সর্বাধিক দার্জিলিং জেলার বাসিন্দা। সারসালি, যশবীরগাঁও, মিরিক বস্তি, ধরগাঁও (মেচি), মিরিক লেক এলাকা ও নাগরাকাটায় একাধিক মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।

    আরও পড়ুন: ঘুরতে গিয়ে আর ফেরা হল না, ছত্তিশগড়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় পথেই শেষ বাংলার ৫ পর্যটক, আহত আরও অনেকে

    এনডিআরএফ জানিয়েছে, দার্জিলিং জেলায় একাই ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে মিরিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত—সেখানে ১১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দার্জিলিং সদর, জোরবাংলো ও সুখিয়া পোখরির বিভিন্ন এলাকায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা থেকে আরও পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

    এনডিআরএফ-এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত মোট ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে মিরিক, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার মানুষ রয়েছেন।” উদ্ধারকাজে এনডিআরএফ, পুলিশ, সেনা এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এখনও বহু এলাকা অগম্য রয়ে গেছে, যা উদ্ধার অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, আবহাওয়ার অবনতির ফলে আরও ভূমিধসের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। পাহাড়ে যাতায়াত আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

    এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড়ি অঞ্চলে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এমন বিপর্যয় বহু বছর দেখা যায়নি। “রাতারাতি সব শেষ হয়ে গেল,” বলছেন এক মিরিকবাসী, যার বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে গেছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
  • Link to this news (আজকাল)