• ছৌ মুখোশ থেকে প্রতিমা, পুজোয় বিপুল লক্ষ্মীলাভ পুরুলিয়ার মুখোশ গ্রাম চড়িদার
    প্রতিদিন | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুজোয় ছৌ মুখোশ বেচেই ঘরে এল অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা। সেইসঙ্গে নিজের জেলা-সহ ভিন রাজ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ তো ছিলই। সবমিলিয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মরশুমে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা আয়। পুজো ঘিরে বিপুল বরাতের জেরে
    লক্ষ্মীপুজোর প্রাক্কালেই একেবারে অর্থনীতি চাঙ্গা পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির মুখোশ গ্রাম চড়িদায়।

    অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে এই মুখোশ গ্রাম। এখানে জন্মেছিলেন ‘পদ্মশ্রী’ গম্ভীর সিং মুড়া। তাঁর হাত ধরেই ছৌ নাচ বিশ্বে নজর কাড়ে। মুখোশ বানিয়ে ২০২৪ সালে পদ্মশ্রী পান এই চড়িদার মুখোশ শিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধর। মরণোত্তর ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে তাঁকে ভূষিত করে কেন্দ্র। ফলে সবে মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মুখোশ বাণিজ্য একেবারে জমজমাট। প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের হাত ধরে বিপুল আয়ের মুখ দেখেন এই মুখোশ শিল্পীরা। তবে একটা গোটা বছরের মধ্যে দুর্গাপুজো ও দোল এই দুটি উৎসবেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ঘরে তোলেন তাঁরা।

    আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে দুর্গাপুজোর সময়েই তাদের আয় সবচেয়ে বেশি হয়। তবে মাঝেমধ্যে কয়েকটি বছরে পুজোর বাজারে তারা ধাক্কা খায়। যেমন গত বছর আরজি করের ঘটনার কারণে পুজোর সময় এই জেলায় সেভাবে পর্যটক আসেনি। ব্যাপকহারে কলকাতায় বা ভিন রাজ্যে বরাতও মেলেনি। তবে দোলে সেই ঘাটতি মিটে যায়। আর এবার পুজোয় বিগত দিনের বিক্রিবাটার রেকর্ড সব কিছুকে ছাপিয়ে মুখোশ বাণিজ্য একেবারে ঊর্ধ্বমুখী।

    এই গ্রামে মোট ১০৫ টি মুখোশ দোকান আছে। মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত শুধুমাত্র পর্যটকদেরকে প্রায় প্রায় তিন লক্ষ টাকার মুখোশ বিক্রি করেন শিল্পীরা। তবে সবচেয়ে বেশি মুখোশ বিক্রি হয়েছে ষষ্ঠী থেকে দশমীতে। এদিকে জগদীশ সূত্রধর, ফাল্গুণী সূত্রধর, বান্টি সূত্রধর, পরিমল দত্ত এই কয়েকজন শিল্পী মিলিয়ে পুজোয় বরাত পেয়ে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার মুখোশ বিক্রি করেন কলকাতা-সহ ভিন রাজ্যে। তার মধ্যে জগদীশ সূত্রধর একাই ৪ লক্ষের বেশি বরাত পেয়েছেন। শিল্পী পরিমল দত্তও প্রায়ই একই অঙ্কের বাণিজ্য করেছেন।

    এছাড়া ফাল্গুণী ও বান্টি সূত্রধরও ২ লক্ষ করে ৪ লক্ষ। তাঁরা গিয়েছিলেন কলকাতায়। জগদীশ সূত্রধরের কথায়, “দিল্লি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া মিলিয়ে পুজোয় প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মুখোশের বরাত পেয়েছিলাম। এছাড়া দুর্গা প্রতিমা তৈরি তো হয়েইছে।” মুখোশ শিল্পী ললিত সূত্রধরের কথায়, “পর্যটক এবং এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা-সহ ভিন রাজ্যে পুজোয় বরাত পাওয়া মুখোশ মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছে। এছাড়া প্রতিমা তৈরি তো আলাদা আছেই।”

    ফাল্গুনী সূত্রধর তার পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ওড়িশার সুন্দরগড় গিয়েছিলেন প্রতিমা তৈরি করতে। প্রায় ৪ লক্ষ টাকার বরাত ছিল তাঁর। শিল্পী জয়দেব সূত্রধর গিয়েছিলেন যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে। ওই শিল্পীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১৩ জন ওই রাজ্যের দুই জায়গায় দুটি দলে ভাগ হয়ে মূর্তি গড়েন। মধ্যপ্রদেশের সিভিতে গিয়েছিলেন ভীম সূত্রধর ও তার সহযোগীরা। তাঁদের বরাত ছিল ২ লক্ষের বেশি। এছাড়া চড়িদার মুখোশ শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে জেলার বিভিন্ন জায়গা সহ ঝাড়খণ্ডেও যান। কাজের বরাত এতটাই যে অগ্রিম টাকা পেয়েই ওই শিল্পীরা পরিবারের সদস্যদের পুজোর সমস্ত জামা-কাপড় কিনে দিয়ে তবেই কাজে রওনা দিয়েছিলেন। পুজোর এই লক্ষ্মীলাভে শিল্পীরা রীতিমতো তাদের পুঁজি বাড়িয়ে তুলছেন। শিল্পী জগদীশ সূত্রধরের ছেলে সোমু সূত্রধর বলেন, “পুজোর যা কাজ হয়েছে তাতে পুঁজি আরও মজবুত হলো।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)