• ভিতরে আগুনের মাঝে কাতরাচ্ছেন রোগীরা, দরজা বন্ধ করে পালালেন চিকিৎসক-কর্মীরা? জয়পুর কাণ্ডে হাড়হিম করা অভিযোগ
    আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাসপাতাল। রোগীরা গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। এক রাতে বদলে গেল গোটা ছবিটা। সোমবার সকালে ভাঙা চশমা, ছাই, পুড়ে যাওয়া আইসিইউ কেন্দ্র এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চপ্পল জয়পুরের রাষ্ট্রীয় পরিচালিত সাওয়াই মান সিং (এসএমএস) হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের ভিতরে। গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানেই। মৃত্যু হয়েছে অন্তত আট জনের। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তথ্য তেমনটাই। 

    ঘটনায় শিউরে উঠছেন স্থানীয়রা। হাসপাতালের বাইরে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের হাহাকার। এসবের মাঝেই উঠে আসছে হাড়হিম করা অভিযোগ। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালের কর্মীরা, চিকিৎসকরা আইসিইউ গেটটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান।  পুলিশ কনস্টেবল হরি মোহন, যিনি নিজের একটি পরীক্ষা করানোর জন্য  হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তিনি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে জানান, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে কাচ ভেঙে রোগীদের বিছানার চাদর দিয়ে বের করে আনেন তিনি। 

    ঘটনার সময় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বাজেনি, দ্বিতীয় তলায় স্প্রিংকলারও কাজ করেনি বলে অভিযোগ। অগ্নিকাণ্ডে নিহত পিন্টু গুজরের ভাই দশরথ গুজর দাবি করেছেন যে, তিনি শর্ট সার্কিটের কথা হাসপাতাল প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর কাতর আবেদনে কর্ণপাত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁর অভিযোগ, 'হাসপাতালের কর্মীরা বলেছিলেন যে, কিছুই হবে না এবং এটি (শর্ট সার্কিট) ঠিক হয়ে যাবে।' তারপরেই বলেন, 'কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধোঁয়ায় ঘর ভরে যায় এবং কর্মীরা পালিয়ে যান। ফায়ার অ্যালার্ম বাজেনি। এমনকী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও খালি ছিল। এক ঘন্টা পরে ফায়ার ব্রিগেড এসে আগুন নিভিয়ে দেয়, তারপরে আমরা পিছনের গেট দিয়ে প্রবেশ করি এবং বিছানার চাদরে জড়িয়ে রোগীদের বের করে আনি।' 

    এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ট্রমা সেন্টারের ইনচার্জ ডা. অনুরাগ ধাকাড জানিয়েছেন যে, স্টোরেজ এলাকায় আগুন লাগার সময় নিউরো আইসিইউতে ১১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

    আগুন দেখেই হাসপাতাল জুড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, ধোঁয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে, রোগী এবং তাঁদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে বহাসপাতালের বিভিন্ন নথি, আইসিইউ সরঞ্জাম, রক্তের নমুনা টিউব এবং এলাকায় সংরক্ষিত অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়ে গিয়েছে।

    পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে দেখে হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের সরিয়ে নিয়ে যান, এমনকি তাদের বিছানা-সহ হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের ভবনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দমকলকর্মীরা পৌঁছে প্রায় দুই ঘন্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

    ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওয়ার্ড বয় বিকাশ সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, আগুন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার আগেই তিনি এবং অন্যান্য কর্মীরা যতটা সম্ভব রোগীদের উদ্ধার করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা যখন আগুন লাগার কথা শুনতে পাই, তখন অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে ছিলাম, তাই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেন্টারের ভেতরে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করতে ছুটে যাই। আমরা কমপক্ষে তিন থেকে চারজন রোগীকে বাঁচাতে পেরেছি। তবে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আমরা আর হাসপাতাল ভবনের ভেতরে যেতে পারিনি। যতটা সম্ভব উদ্ধার করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।' বিকাশ আরও বলেন যে, পুলিশ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এসেছিল, কিন্তু প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে তাঁরা সেই সময়ে হাসপাতাল ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।

     
  • Link to this news (আজকাল)