নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হল আইএনএস আন্দ্রোথ, জিআরএসই-র গৌরবময় সাফল্য...
আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় নৌবাহিনীতে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিল অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার শ্যালো ওয়াটার ক্রাফ্ট শ্রেণির দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস আন্দ্রোথ। গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড -এর নির্মিত এই যুদ্ধজাহাজটিকে সোমবার বিশাখাপত্তনম নৌ ডকইয়ার্ডে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে কমিশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস অ্যাডমিরাল রাজেশ পেন্ধারকর, পিভিএসএম, এভিএসএম, ভিএসএম, ফ্ল্যাগ অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ, ইস্টার্ন নেভাল কমান্ড। এছাড়াও ছিলেন জিআরএসই-র চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর কমোডর পি.আর.হরি (অবসরপ্রাপ্ত), ভারতীয় নৌবাহিনী ও জিআরএসই-র ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা, শ্রেণিবিন্যাস সংস্থার প্রতিনিধি এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ।
ভারতীয় নৌসেনার জাহাজের বৈশিষ্ট্য ও সক্ষমতা
আইএনএস আন্দ্রোথ গত ১৩ সেপ্টেম্বর জিআরএসই-র পক্ষ থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। লক্ষদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের আন্দ্রোথ দ্বীপের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এটাই এই শ্রেণির দ্বিতীয় জাহাজ, যেখানে প্রথমবারের মতো জিআরএসই-র নিজস্ব নির্মিত ৩০ মিমি নৌসারফেস গান সংযোজন করা হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী মোট ১৬টি অ্যাডভান্সড ASW SWC নির্মাণের অর্ডার দিয়েছিল। এর মধ্যে আটটি জাহাজ তৈরি করছে জিআরএসই এবং বাকি আটটি আরেকটি ভারতীয় শিপইয়ার্ড। ইতিমধ্যেই জিআরএসই দুটি জাহাজ হস্তান্তর করেছে, যা সংস্থার দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতাকে আরও উজ্জ্বলভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।
এই যুদ্ধজাহাজগুলিতে ৮৮ শতাংশ দেশীয় উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে, যা 'আত্মনির্ভর ভারত' ও 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগের প্রতিফলন। এগুলি উপকূলবর্তী জলে সাবমেরিন নজরদারি, সার্চ ও আক্রমণ চালাতে সক্ষম এবং বিমান বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানেও ব্যবহারযোগ্য। হালকা টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার রকেট যুক্ত এই জাহাজে রয়েছে অত্যাধুনিক কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। প্রতিটি জাহাজে থাকবেন মোট ৫৭ জন নৌসেনা, যার মধ্যে সাতজন অফিসার।
আইএনএস আন্দ্রোথ-এ তিনটি ওয়াটার জেট (মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন সংযুক্ত) বসানো হয়েছে, যা এটিকে আরও দ্রুতগামী করে তুলেছে। মাত্র ২.৭ মিটার ড্রাফট থাকায় এটি অগভীর জলে প্রবেশ করে সাবমেরিন হুমকি মোকাবিলায় বিশেষ সুবিধা দেবে।
ভারতীয় সেনার শীর্ষকর্তাদের বক্তব্য
অনুষ্ঠানে ভাইস অ্যাডমিরাল রাজেশ পেন্ধারকর বলেন-"আত্মনির্ভরতার যাত্রায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জিআরএসই-এর অবদান অমূল্য। ৮০ শতাংশেরও বেশি দেশীয় উপাদানে তৈরি আন্দ্রোথ দেখিয়ে দিল ভারত এখন নিজস্ব দক্ষতা, প্রযুক্তি ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে সক্ষম। এটি ভারতের একক জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের পথে সম্মিলিত শক্তি ও যোগ্যতার প্রতীক।"
জিআরএসই-র চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর কমোডর পি.আর. হরি (অব.) বলেন- "ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এত শক্তিশালী ASW SWC নির্মাণ করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই চুক্তি অনুযায়ী বাকি জাহাজগুলো হস্তান্তর করব।"
জিআরএসই-র ভবিষ্যৎ প্রকল্প
বর্তমানে জিআরএসই আরও ১৩টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে-
দুটি পি-১৭এ আধুনিক স্টেলথ ফ্রিগেট
ছয়টি ASW SWC
একটি সার্ভে ভেসেল (লার্জ)
চারটি নেক্সট জেনারেশন অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল
এছাড়া সংস্থাটি আরও ৩০টি জাহাজ নির্মাণ করছে, যার মধ্যে ১৩টি রপ্তানি প্ল্যাটফর্ম। চলতি অর্থবর্ষেই পাঁচটি নতুন প্রজন্মের করভেট নির্মাণের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইএনএস আন্দ্রোথ-এর অন্তর্ভুক্তি শুধু ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করল না, বরং দেশীয় প্রযুক্তি ও দক্ষতায় জাহাজ নির্মাণ ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের নতুন দিগন্তও উন্মোচন করল।