আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত সেপ্টেম্বরে দার্জিলিংয়ের সোনাদার দিকে রওনা হয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের পারুলিয়া কোস্টাল থানার অন্তর্গত কামারপোল এলাকার বাসিন্দা ২৫ বছরের হিমাদ্রী পুরকাইত। উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের পর তাঁর পরিবারে দুশ্চিন্তার ছাপ। শনিবার রাতে শেষ কথা হয়। তারপর থেকে আর খোঁজ নেই হিমাদ্রীর। ছেলে কেমন আছে, তা নিয়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে বাবা-মায়ের।
ইতিমধ্যে হিমাদ্রির খোঁজ শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ প্রশাসনও। যোগাযোগ করা হচ্ছে দার্জিলিং প্রশাসনের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, হিমাদ্রি কখনও ট্যুর গাইড হিসেবে, কখনও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় কাজ করতেন। গায়ক হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল। পুজোর আগে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সুখিয়া পোখরিতে গিয়েছিলেন। সেখানকার সোনাদা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু শনিবারের পর থেকে হিমাদ্রির সঙ্গে পরিবারের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখনও তাঁর কোন খোঁজ মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন তাঁর পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধবরা।
শনিবার রাতের একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে সাজানো গোছানো শৈলশহর। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থির মধ্যেই দার্জিলিঙের একাধিক রাস্তায় ধস নেমেছে। বিচ্ছিন্ন হয়েছে একাধিক রাস্তার মধ্যে সড়ক যোগযোগ। ফলে ব্যাপক সমস্যার মুখ পড়েছেন পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকেরা।
হিমাদ্রী পুরকাইত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সে কখনও ট্যুর গাইড হিসেবে, কখনও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাহাড়ি এলাকার হোমস্টে কটেজে কাজ করেন। জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ে একটি ভ্রমণকারী দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাহাড়ে যান তিনি। রবিবার সুখিয়া পোখরি থানা হিমাদ্রির বাবা-মাকে জানায়, প্রবল বৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যায় টেন্টটি ভেসে যেতে পারে।
ছেলের খবর না পেয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হিমাদ্রির বাবা-মা। হিমাদ্রির বাবা প্রশান্ত পুরকাইত ও মা শুক্লা পুরকাইত জানিয়েছেন, শনিবার রাতে শেষবার হিমাদ্রির সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। হিমাদ্রির মা বলেন, "রোজ ফোন করত। শনিবার রাত ১০টাতেও কথা হয়েছে। বলল, মা শুয়ে পড়েছি। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, বিদ্যুৎ থাকবে না। রবিবার সকাল থেকে আর ফোনে পাচ্ছি না। য়া অবস্থা দেখছি তাতে খুব চিন্তা হচ্ছে।" তাঁদের ছেলে যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন, সেই প্রার্থনা করছেন হিমাদ্রির বাবা-মা।
নিখোঁজ ছাত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সংসদ অভিষেক ব্যানার্জিও। সম্পূর্ণ বিষয় জানার পর ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হিমাদ্রির বাড়িতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শামীম আহমেদ হিমাদ্রির বাড়িতে যান এবং বাবা মার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নিখোঁজ যুবককে বাড়ি ফেরানোর জন্য সব রকম চেষ্টা শুরু করেছে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের সংসদ অভিষেক ব্যানার্জি।
এই বিষয়ে কামারপোল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশিষ হালদার বলেন, "অ্যাডভেঞ্চার ওকে ডাকতো। বেশ কয়েক মাস আগে উত্তরাখন্ড থেকে ঘুরে এসেছে আবার গিয়েছে দার্জিলিংয়ে।"
সময় যত এগোচ্ছে ততই উৎকণ্ঠা গাঢ় হচ্ছে হিনাদ্রীর পরিবারের। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসক অঞ্জন ঘোষ বলেন, "নিখোঁজ যুবকের যাবতীয় তথ্য ও ছবি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। সবসময়ই দার্জিলিং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।"