উত্তরবঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী, কঠিন পরিস্থিতিতে মমতার বার্তা, 'কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়'...
আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরবঙ্গে পৌঁছনোর আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দুর্যোগে মৃতদের পরিবারের জন্য রাজ্য সরকারের ভাবনা এবং সিদ্ধান্তের কথা। সোমবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরবঙ্গে পৌঁছে প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন। কোথায়, কোন ব্রিজ তৈরি হচ্ছে, কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিল, নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন। জানান, 'চা বাগানগুলোতে, যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে চা বাগান ম্যানেজমেন্ট এবং রাজ্য সরকার একসঙ্গে কাজ করবে।' জল কমার পর, সামগ্রিক সার্ভে করেই কোথায় কত ক্ষতি নিশ্চিত হবে বলে জানান। একই সঙ্গে জানান, 'যাঁদের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, আমাদের সরকার সঙ্গে ছিল, আছে, থাকবে।' সেতু ভেঙেছে মিরিকে। সেখানে তৈরি হচ্ছে নতুন ব্রিজ। তাতে যে সময় লাগবে, তার আগে তৈরি হবে সাময়িক সেতুও। সোমবারেই, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে, ক্ষতিপূরণ তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে, উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, 'কালকে যাঁরা বন্যায় মারা গিয়েছেন, ২৩ জন, তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং প্রতি পরিবারের একজনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরিও দেওয়া হবে, যাতে পরিবারগুলি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়।' একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যদিও আমি জানি, জীবনের বিকল্প কক্ষনও টাকা হয় না। কিন্তু যে চলে যায়, তাঁর পরিবার থেকে যায়। পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য এটা আমাদের সামাজিক কর্তব্য।''
তার আগেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। লেখেন, কঠিন পরিস্থিতিতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়। পোস্টে তিনি লেখেন, 'আমার আন্তরিক আবেদন, এই দুর্যোগে বহু মানুষ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁদের কষ্ট আমরা গভীরভাবে অনুভব করছি। তবুও, এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে , একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
সবার কাছে অনুরোধ, সাহস হারাবেন না, সংযম ও সতর্কতা বজায় রাখুন। সরকার ও প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে মানুষের পাশে আছে, এবং আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব।
দয়া করে শান্ত থাকুন, গুজবে কান দেবেন না, এবং চারপাশের মানুষকে সহযোগিতা করুন। এই সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয় , আমরা একে অপরের পাশে থেকে, একসাথে এই সংকটের মোকাবিলা করব।'
তার আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটি পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে তিনি লেখেন-'আজ আমরা উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সেখানে উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ দেখতে আমি দু'দিন থাকব। আমার মুখ্য সচিব আমার সঙ্গে যাচ্ছেন, পুলিশের ডিজি ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকায় উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালাচ্ছে। বহু এলাকায় আমরা কমিউনিটি কিচেন খুলেছি, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হচ্ছে এবং যেখানে হোটেলের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হবে, তা আমাদের খরচে করা হবে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (NBSTC) এবং আমাদের অন্যান্য পরিবহণ সংস্থাগুলি আটকে পড়া পর্যটকদের সরিয়ে আনার জন্য বিশেষ ভলভো এবং দূরপাল্লার বাসের ব্যবস্থা করেছে। যদিও মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না , তবুও আমরা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেব এবং বিশেষ মানবিক উদ্যোগ হিসেবে প্রত্যেক পরিবারে একজন সদস্যকে একটি বিশেষ হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। আমি আজ ও আগামীকাল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করব, এবং আমাদের প্রশাসন এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের কাছে সমস্ত মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা-হুগলি নদীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ড্রেজিংয়ের কাজ করত, এবং যদি ডিভিসি তাদের পলি তোলার কাজ করত (যা তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে না), যদি তাদের বাঁধ ও ব্যারেজগুলি আমাদের বিরুদ্ধে এইভাবে ব্যবহৃত না হত, এবং যদি কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা অন্যান্য অপ্রাসঙ্গিক এবং জনবিরোধী কাজে নষ্ট না করে বাংলায় প্রয়োজনীয় জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করা হত, তবে আমাদের মানুষ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে এই ম্যান-মেড বন্যার অনেক দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতেন। আমাদের নিজেদের সেচবিভাগের অনেক কাজ এবং বিশেষত চেক ড্যামগুলি অনেক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহায়ক হয়েছে।
আমরা আছি, সর্বদা, প্রতি মুহূর্তে।' পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা কীভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন, তার কিছু ছবিও মুখ্যমন্ত্রী পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।