• জ্বলল না প্রদীপ, বাজল না শঙ্খ, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে হাহাকার ঘরের 'লক্ষ্মী'দের...
    আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবছর আর আয়োজন করা হল না লক্ষ্মী পুজোর‌। অন্যান্য বছর এই দিনটিতে যত্ন করে এবং ভক্তিভরে সম্পদের দেবীর আরাধনা করলেও বন্যায় কেড়ে নিয়েছে প্রায় সবকিছুই‌। নিজেদের বসার জায়গাটুকু পর্যন্ত ভিজে সপসপে। যে দিকে তাকিয়ে গৃহবধূ সোলতা সরকার বলে উঠলেন, 'অলক্ষ্মীতে ধরেছে।  ঘরে খাবার নেই। গতকাল সারাদিন কেউ এক বোতল জল দিয়েও জিঞ্জাসা করেনি। এই অবস্থাতে আবার লক্ষ্মীপুজো!' জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুল্লাপাড়া এলাকার ষোলতা সরকারের গলায় ক্ষোভের সুর। 

    ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এই এলাকা। রুদ্ররুপে জলঢাকা বয়ে গিয়েছে এই এলাকার উপর দিয়ে। ঘরের ভিতরে থাকা সমস্ত জিনিসপত্র যেমন বিছানা এমনকী বাইক, ম্যাটাডোর পর্যন্ত রীতিমতো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে মাটি সরে গিয়ে বাড়ির উঠোন বিরাট খাদে পরিণত হয়েছে। রাস্তার পাশে প্রায় ৫ ফুট গভীরে থাকা পানীয় জলের লাইন উপড়ে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। এলাকার বহু ঘরবাড়ি এককথায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত।

    রবিবার সকালে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন সোলতা সরকার। ৯ টা নাগাদ মেয়ে টিউশনে যাওয়ার পরেই শুরু হয়  প্রকৃতির এই ভয়াবহ ধংসযজ্ঞ। তাঁর দাবি, ৩০-৩৫ টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে এলাকায়। মানুষ কোনো রকমে উঁচু জায়গায় পৌছে নিজের জীবন রক্ষা করতে পেরেছে। টিউশন থেকে মেয়েকে ময়নাগুড়িতে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। সোমবার কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনে গধেয়ারকুঠি গ্রামের কুর্শামারী, চরচরাবাড়ি, বগরিবারী হোগলারটারি, কুল্লাপাড়া এলাকায় কোনো আলোর রোশনাই বা ঢাকের আওয়াজ বা পুজোর আয়োজন নেই। এদিন লক্ষীপুজোর দিন লক্ষ্মীরাই ঘরছাড়া। পুজোর আয়োজনের জন্য প্রয়োজন পরিস্থিতি এবং জায়গা। অবশ্যই মানসিক সুস্থিরতা। বিপাকে পড়া এই অস্থির মানুষগুলোর এই মুহূর্তে যেটার অভাব‌। তাই হয়ত লক্ষী আজ এখানে আসতে চেয়েও আসতে পারলেন না।

    শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল, টানা বৃষ্টি। কলকাতার এক রাতের জলযন্ত্রণার ছবি যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ফিরেছিল উত্তরবঙ্গে। ভারী বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গ একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়। জানা গিয়েছে, ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০০ মিমি-র বেশি। একাধিক জায়গায় ধস, ভেঙে পড়েছে সেতু, কোথাও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগের একমাত্র পথ। আটকে পর্যটকরা। আতঙ্ক ব্যাপক। তবে রবিবারের ব্যাপক আতঙ্ক ধীরে ধীরে কেটে, সোমবার থেকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাহাড়। তবে, যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তার দাগ দগদগে ক্ষত হয়ে রয়ে গিয়েছে স্থানীয়দের মনে। পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে? আদেউ আগের মতো হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন চোখেমুখে। এই পরিস্থিতিতে আর উৎসবে মেতে ওঠার, আলোর, রোশনাইয়ের যেন ইচ্ছেটাই নেই বহু মানুষের। 
  • Link to this news (আজকাল)