• ভরা দামোদরে ভেসে গেলেন ৩৫ কিলোমিটার, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন সত্তরোর্ধ্বা!
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • যেন সিনেমার নাটকীয় দৃশ্য! কিন্তু ঘটনাটি একেবারে বাস্তব। ভরা দামোদরের উচ্ছ্বাসে ভেসে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রাণে ফিরে এলেন এক সত্তরোর্ধ্বা মহিলা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ভাগ্যের জোরে জীবনে বেঁচে থাকার দ্বিতীয়বার সুযোগ পেলেন রায়নার জাকতা গ্রামের মাতুরি টুডু।

    জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে নিজের মতো করে দামোদর নদে স্নান করতে নেমেছিলেন মাতুরি। প্রবল স্রোতের মধ্যে স্নান সেরে ওঠার সময়ই পা হড়কে নদীতে পড়ে যান তিনি। দামোদর এখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে ফুঁসছে। ডিভিসির জলাধার থেকে লাগাতার জল ছাড়ায় নদীর জলস্তর অনেক বেড়ে গিয়েছে। ফলে তীব্র স্রোতে মুহূর্তে ভেসে যান বৃদ্ধা। এমনকি সাহায্যের আর্তি জানিয়ে চিৎকার করারও সময় পাননি।

    তারপর শুরু হয় এক অবিশ্বাস্য বাঁচার লড়াই। কখনও নদীর গভীরে তলিয়ে যাচ্ছেন, আবার কখনও জলের ওপর ভেসে উঠছেন। যা কিছু ভাসমান বস্তু পেয়েছেন— খড়কুটো, কচুরিপানা, এমনকি গাছের ডাল সবই আঁকড়ে ধরেছেন প্রাণপণে। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধে নামছে, আলো নিভে আসছে, কিন্তু হাল ছাড়েননি মাতুরি। ঠান্ডা জল আর তীব্র স্রোতের সঙ্গে একটানা লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।

    অবশেষে রাত নেমে আসার মুখে তিনি পৌঁছে যান জামালপুর থানার মুইদিপুর এলাকায়। সেখানেই দামোদর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একদিকে মুণ্ডেশ্বরী, অন্যদিকে দামোদর নামে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর বাঁধে পোঁতা বাঁশের খুঁটি আঁকড়ে ধরেই প্রাণ বাঁচান মাতুরি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জলে ভেসে থাকার পর তাঁর হাত-পা অবশ হয়ে গিয়েছিল, ঠান্ডায় শরীর কাঁপছিল। তবুও জীবনের শেষ শক্তিটুকু সংহত করে চিৎকার করেন, ‘বাঁচাও! বাঁচাও!’

    নদীর মাঝখান থেকে আসা সেই অস্পষ্ট আওয়াজ গ্রামবাসীদের কানে পৌঁছতেই জোতশ্রীরাম অঞ্চলের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে নদীর ধারে ছুটে যান। খবর পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা তপন দে ও ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খান ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর বৃদ্ধাকে নদীর পাড়ে টেনে তোলা হয়।

    মেহেমুদ খান জানান, ‘ওই অবস্থায়ও বৃদ্ধা জীবিত আছেন দেখে আমরা অবাক হয়েছি। তৎক্ষণাৎ তাঁকে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাই। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’ হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ক্লান্ত মাতুরি কাঁপা গলায় শুধু বলেন, ‘স্নান করতে নেমেছিলাম, তারপর কিছুই মনে নেই।’

    স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এ যেন অলৌকিক ঘটনা! ভরা দামোদরে এতদূর ভেসে বেঁচে থাকা যে সম্ভব, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।’


    গ্রামের আর এক বৃদ্ধা যোগ করেন, ‘কথায় বলে না, রাখে হরি মারে কে! আজ চোখে দেখলাম কথাটা সত্যি।’

    দামোদরের গর্জনের মধ্যে এক প্রবীণ মহিলার এই জীবন্ত প্রত্যাবর্তন এখন রায়না থেকে জামালপুর সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)