আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টে সোমবার এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গিয়েছে। শুনানির সময় এক আইনজীবী দেশের প্রধান বিচারপতি বি.আর.গাভাইয়ের দিকে জুতো ছোড়ার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তারক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তকে আটক করে আদালতের বাইরে নিয়ে যায়। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘সনাতন ধর্মের অপমান ভারত সহ্য করবে না।’ ঘটনাটি ঘটে আদালতে শুনানির মধ্যেই। উপস্থিত আইনজীবীরা জানান, জুতোটি বিচারপতি বিনোদ চন্দ্রনের গায়ে লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরে ওই অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোর বিচারপতি চন্দ্রনের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘জুতোটি আসলে প্রধান বিচারপতির জন্যই ছোঁড়া হয়েছিল।’
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল, যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রধান বিচারপতি গাভাই মধ্যপ্রদেশের একটি ভাঙা বিষ্ণুমূর্তি পুনর্স্থাপনের মামলায় শুনানির সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তিনি আবেদনকারীকে বলেছিলেন, ‘যদি আপনি ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত হন, তবে গিয়ে দেবতার কাছেই প্রার্থনা করুন।’ তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রবল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। এদিনের ঘটনার পরেও প্রধান বিচারপতি গাভাই সম্পূর্ণ শান্ত ছিলেন এবং কার্যক্রম বন্ধ না করেই বলেন, ‘এসব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। এই ধরনের ঘটনা আমাকে প্রভাবিত করে না। শুনানি চালিয়ে যান।’
পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সচিব জেনারেল ও নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। আইনি মহলে এই ঘটনাকে আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার এক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে বিষ্ণু মূর্তি পুনর্স্থাপনের আবেদনটিকে ‘জনস্বার্থ মামলা’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছিল যে বিষয়টি আদালতের নয়, ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) এক্তিয়ারভুক্ত।
মামলা খারিজ করার সময় প্রধান বিচারপতি আবেদনকারীকে বলেন, ‘যান, ভগবানকে এখনই কিছু করতে বলুন। আপনি বলেছেন আপনি ভগবান বিষ্ণুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই এখনই গিয়ে প্রার্থনা করুন। এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং এএসআই-এর অনুমতি নেওয়া দরকার ইত্যাদি।’রাকেশ দালাল নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, মুঘল আক্রমণের সময় মূর্তিটি বিকৃত হয়ে যায় এবং এটি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও মূর্তিটি সেই একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। আবেদনকারীর যুক্তি ছিল যে মূর্তিটি পুনরুদ্ধার করতে কেন্দ্র রাজি না হওয়ায় ভক্তদের পুজো দেওয়ার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।
আবেদনে মন্দির সম্পর্কিত প্রতিবাদ, স্মারকলিপি এবং প্রচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার, এএসআই এমন কিছু করার অনুমতি দেবে কি দেবে না... অনেক বিষয় রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে, যদি আপনি শৈবধর্মের প্রতি বিরূপ না হন, তাহলে আপনি সেখানে গিয়ে পুজো করতে পারেন... সেখানে শিবের একটি খুব বড় লিঙ্গ রয়েছে, যা খাজুরাহোর বৃহত্তম লিঙ্গগুলির মধ্যে একটি।’