• জয়পুরের হাসপাতালে আগুন, বেঘোরে প্রাণ গেল ৮ রোগীর
    বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • জয়পুর: ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভাঙা কাচ, চপ্পল-জামাকাপড়। পোড়া যন্ত্রপাতি। আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ। এমনই দৃশ্য রাজস্থানের জয়পুরের সোয়াই মান সিং (এসএমএস) হাসপাতালে। রবিবার গভীর রাতে হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারের আইসিইউতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হল আট মুমূর্ষু রোগীর। তাঁদের মধ্যে তিনজন মহিলা। এই দুর্ঘটনায় হাসপাতাল কর্মী ও চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন মৃতদের পরিজনরা। যদিও আগুনে রোগীদের মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জয়পুরের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজস্থানের বিজেপি সরকার। বিরোধীদের সমালোচনার মুখে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেছে সরকার। 

    রাত তখন ১১টা। আচমকাই আইসিইউ থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। উদ্বিগ্ন রোগীর পরিজনরা বিষয়টি জানালেও হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মীরা কোনও গুরুত্ব দেননি। কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, এরপরই পালিয়ে যান আইসিইউর কর্মী ও ডাক্তাররা। শুধু তাই নয়, আইসিইউ ঢোকার গেটে তালা লাগিয়ে যান তাঁরা। অভিযোগ, হাসপাতালের ফায়ার অ্যালার্ম বাজেনি। এমনকী স্প্রিংকলারও কাজ করেনি। এই পরিস্থিতিতে রোগীদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন পরিজনরাই।  কাচ ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিছানার চাদর জড়িয়ে রোগীদের বের করে নিয়ে আসা হয়। শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন পুলিশের কনস্টেবল হরিমোহন। তিনি আগুন নেভানোর যন্ত্র দিয়ে কাচ ভেঙে কয়েকজনকে উদ্ধার করেন। 

    ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দশরথ গুজরের। তাঁর ভাই পিন্টু বলেন, আগুন লাগার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁরা বিষয়টি অগ্রাহ্য করেন। ৫৫ বছরের রুক্মিণীর দেবীরও মৃত্যু হয়েছে আগুনে। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁপে উঠলেন মহিলার দুই ছেলে যোগীন্দর ও শেরুর। তাঁদের কথায়, আগুন লাগার কথা একাধিকবার বলা সত্ত্বেও কর্মীরা কান দিলেন না। উলটে গেটে তালা দিয়ে পালিয়ে গেলেন। মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন নরেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, রাতে খাবার নিতে নীচে এসেছিলাম। আইসিইউতে আগুন লেগেছে প্রথমে জানতেই পারিনি। আগুন নেভানোর মতো সরঞ্জাম ছিল না হাসপাতালে। উলটে কর্মীরা দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান। আমরা কিছুই করতে পারিনি। অন্যন্য রোগীর আত্মীয়রাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। উদ্ধার হওয়া রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে যেতে হাসপাতালের কোনও কর্মীর দেখা মেলেনি। এমনকী পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং দমকল আসতে এক ঘণ্টার বেশি দেরি করেছে বলে অভিযোগ। 

    হাসপাতালের সুপার সুশীল ভাটির সাফাই, আগুনে কোনও রোগীর মৃত্যু হয়নি। যে রোগীদেরর মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের প্রধান অনুরাগ ধাকড়ের দাবি, ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছিল। যতটা সম্ভব রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি ঘটনার তদন্তে স্বাস্থ্য দফতরের কমিশনারের নেতৃত্বে একটি টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।  
  • Link to this news (বর্তমান)