• সনাতনী দোহাই! প্রধান বিচারপতির দিকে জুতো ছুড়ে ধৃত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
    বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা ৩৫। গত এক সপ্তাহ পুজোর ছুটির পর সোমবার সবে খুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাই নানা মামলায় আইনজীবীদের ‘উল্লেখপর্ব’ চলছিল। এজলাসে উপস্থিত স্বয়ং দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। আচমকা একেবারে সামনে এসে পড়লেন পূর্ব দিল্লির ময়ূর বিহারের বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সি আইনজীবী রাকেশ কিশোর। শুরু করলেন স্লোগান, ‘সনাতন ধরম কা অপমান, নেহি সহেগা হিন্দুস্তান।’ তা দিতে দিতেই খুলে ফেললেন পরনের স্পোর্টস শ্যু। তবে সামনে বসা দেশের প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে সেটি ছোড়ার আগেই অবশ্য আটকানো হল তাঁকে। ঘটনায় আকস্মিকতায় গোটা এজলাস হতচকিত। দেশের প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে জুতো! আগে কোনওদিন এরকম হয়নি। শুধু সর্বোচ্চ আদালতে নয়, হইচই পড়ে গেল দেশজুড়েই। 

    যদিও নির্লিপ্ত বি আর গাভাই। শুধু বললেন, ‘এসব ঘটনা আমাকে বিচলিত করে না। ইগনোর ইট। বিভ্রান্ত হবেন না। কার কী মেনশন করার আছে করুন।’ এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যা঩সোসিয়েশন। অভিযুক্ত আইনজীবীকে সাসপেন্ড করেছে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। আপাতত দেশের কোনও আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা আইন সংস্থায় প্র্যাকটিস করতে করতে পারবেন না তিনি। সমালোচনায় সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন। পরে এক্স হ্যান্ডলে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে দেশের প্রধান বিচারপতির উপর হামলায় ক্ষুব্ধ প্রত্যেক ভারতবাসী। আমাদের সমাজে এই ধরনের নিন্দনীয় কাজের কোনও স্থান নেই। এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও বিচারপতি গাভাই যেভাবে শান্ত ছিলেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মতে, ‘এটা স্রেফ দেশের প্রধান বিচারপতিকে অপমান নয়, সংবিধানের উপর আঘাত। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিনয়ের সঙ্গে অগ্রাহ্য করলেও গোটা দেশের সচেতন মানুষদের এব্যাপারে প্রতিবাদ করা উচিত।’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ভয়ানক ঘটনা। এটা আদতে দেশের সংবিধানের উপরই হামলা।’

    ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও এদিনের ঘটনায় হতভম্ব। তাঁর মন্তব্য, ‘নিউটনের একটি সূত্র আছে—প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান প্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু এখন, প্রতিটি ক্রিয়ার একটা অতিরঞ্জিত সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিক্রিয়া হয়, মাইলর্ড।’ কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সঞ্জয় বর্ধনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আদালতে কড়া নিরাপত্তা দেওয়া হোক।’ কিন্তু কী সেই ক্রিয়া, যার প্রতিক্রিয়া এত নিন্দনীয়? ঘটনা হল, গত ১৬ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্স নিয়ে এক মামলার শুনানি ছিল দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে। সেখানকার জাভারি মন্দিরে মুখমণ্ডলহীন সাত ফুট উঁচু বিষ্ণু মূর্তির সংস্কার চাইছিলেন এক আইনজীবী। তখনই প্রধান বিচারপতি মামলাটি খারিজ করতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যদি আপনি সত্যিই বিষ্ণুর ভক্ত হন, তবে যান এবং প্রার্থনা করুন। দেবতাকে বলুন যেন উনি নিজেই কিছু করেন। খাজুরাহো একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং এএসআইয়ের অনুমতি প্রয়োজন।’ এই মন্তব্যেরই প্রতিক্রিয়াতেই আ‌ইনজীবী রাকেশ কিশোর জুতো ছুড়ে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। অভিযুক্তকে আটক করে তিন ঘণ্টা জেরা করেছে দিল্লি পুলিস। তাঁর কাছে পাওয়া গিয়েছে স্লোগান লেখা চিরকুট। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রধান বিচারপতির পরামর্শ মেনে তাঁকে ছেড়ে দিতে বলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল। জেড প্লাস সিকিওরিটিপ্রাপ্ত দেশের প্রধান বিচারপতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ বৈঠকেও 

    বসেছে শীর্ষ আদালত।
  • Link to this news (বর্তমান)