ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বিপর্যয়ের জেরে বন্ধ লক্ষ্মীর আরাধনা। জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ দুর্গত এলাকায় এবার লক্ষ্মীপুজো হল না। জলবন্দি বাসিন্দারা এখন মাথাগোঁজার ঠাঁই খুঁজতে মরিয়া। ফলে এ বছর লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতে পারলেন না অনেকেই। দুর্গতদের আক্ষেপ, ঘরে জল ঢুকে সবটাই তছনছ করে দিয়েছে। ভেসে গিয়েছে গৃহস্থালীর জিনিসপত্র থেকে লক্ষ্মীর আসনও। তাছাড়া হাতে টাকাপয়সা নেই। ফলে এবার লক্ষ্মীপুজো করা সম্ভব হল না। এতে স্বভাবতই মন খারাপ দুর্গতদের। তাঁদের কথায়, প্রতিবছর ঘরে ঘরে আলপনা, শঙ্খ-উলুধ্বনিতে মা লক্ষ্মীকে বরণ করে নিতেন তাঁরা। কিন্তু নিজেরা কোথায় রাত কাটাবেন, কী খাবেন এখন সেই চিন্তাতেই ব্যস্ত তাঁরা। ফলে পুজো করবেন কীভাবে? তবে পুজো না করলেও মা লক্ষ্মীর কাছে তাঁদের প্রার্থনা, সবটা যেন তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যায়। আগামী বছর যেন তাঁরা ভালোভাবে কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনা করতে পারেন।
দুর্যোগের জেরে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হল প্রতিমা শিল্পী থেকে ব্যবসায়ীদেরও। কারণ, বাজারে লক্ষ্মী প্রতিমা ও পুজোর উপকরণ থাকলেও তা সেভাবে বিক্রি হয়নি। অনেকের আবার বক্তব্য, বিপর্যয়কে সামনে রেখে পুজোর ফলমূলের দাম অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে সেসব কেনার সামর্থ্য ছিল না অনেকেরই। জলপাইগুড়ির দিনবাজারে আখ, বাতাবি লেবু বিক্রি করছিলেন স্বপন কুণ্ডু। বললেন, শহর লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় তিস্তার জল উঠে এসেছে। বহু বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো হচ্ছে না। ফলে ফলমূলের বিক্রি নেই। যদিও তাঁর কথায়, আমার ব্যবসা না হওয়ায় কিছুটা লোকসান হল। কিন্তু যাদের ঘরে জল উঠেছে, দ্রুত সেই জল নেমে যাক, এটাই প্রার্থনা করি।
জলপাইগুড়ির খড়িয়া পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সুকান্ত নগরের বাসিন্দা রূপা দাস বলেন, বাড়িতে তিস্তার জল উঠে গিয়েছে। ঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিতে হয়। এদিন কিছুটা জল কমেছে। কিন্তু ঘরময় কাদা। এর মধ্যে কীভাবে লক্ষ্মীপুজো করব?
যদিও একটু হলেও স্বস্তির খবর, ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠিতে জলঢাকা নদীতে কিছুটা জল নেমেছে। জলস্তর খানিকটা কমেছে তিস্তায়। তবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলায় দুশ্চিন্তা কাটছে না। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সুকান্তনগর, বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দারা রবিবার অনেকেই ঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের ঘরের মধ্যে কোমর সমান জল হয়ে গিয়েছিল। এদিন সকালে সেই জল নেমেছে। তবে জল নামলেও চারদিকে কাদা। এদিন সকাল থেকে বিবেকানন্দপল্লি, সুকান্তনগর এলাকার দুর্গতদের কেউ কেউ বাঁধের আশ্রয় ছেড়ে আবার ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ছবি: উজ্জ্বল রায়