নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ত্রাণ নিয়েও রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। সোমবার নাগরাকাটায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও সাড়া পাইনি। বন্যা ত্রাণে বাংলাকে এক পয়সাও দেওয়া হয় না। সেই সঙ্গে নাম না করে পদ্ম শিবিরের নেতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর মন্তব্য, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে ধৈর্য ধরে মানুষের কথা শুনতে হবে। ৩০-৩৫টি গাড়ি নিয়ে গিয়ে ফটোশ্যুট করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। এদিকে, সন্ধ্যার পর থেকে মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় ‘ক্যাম্প’ করেছেন মমতা। সেখানে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। বিপর্যয় মোকাবিলায় সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতল। বহু রাস্তা, সেতু, কালভার্ট, বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বংসী এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেই এদিন কলকাতা থেকে চলে আসেন মমতা। তাঁর বিমান নামে আলিপুরদুয়ার জেলার হাসিমারায়। সেখান থেকে তিনি বন্যা কবলিত নাগরাকাটায় গিয়ে কালীখোলায় দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। দুর্গতদের কেউ কেউ বন্যায় সর্বস্ব হারানোর বর্ণনা দেন। অভয় দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দেন মমতা। তাঁর কথায়, আপনাদের পাশে সরকার আছে। বাড়ি, ঘর করে দেওয়া হবে। দুর্যোগ এখনও কাটেনি। তাই এখনই বাড়িতে না গিয়ে ত্রাণ শিবিরে থাকুন।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান কালীখোলা ব্রিজে। ব্রিজের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত খতিয়ে দেখেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন করা উচিত। কেন্দ্র তা করেনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও সাড়া পাইনি। সংকোশ সহ ভুটানের প্রায় ৫৬টি নদীর জলে উত্তরবঙ্গ ডুবছে। সিকিম ১৪টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে। সেগুলিও জলে ভাসছে। ফরাক্কায় ড্রেজিং করছে না।
রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী যোগ করেন, গঙ্গা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অফিসও কলকাতা থেকে পাটনায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ওদের কোনও সমন্বয় নেই। ব্রহ্মপুত্র কমিশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তোর্সা ও তিস্তা নদীকে। বন্যাত্রাণে বাংলাকে এক পয়সাও দেওয়া হয় না। সবই বাংলার প্রতি বঞ্চনা। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কোচবিহার জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কোচবিহারে দুর্যোগের সম্ভবনা রয়েছে। এজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
সন্ধ্যায় নাগরাকাটা থেকে উত্তরকন্যায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সহ রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ছিলেন। আজ, মঙ্গলবার তিনি ধস বিধ্বস্ত মিরিক যাবেন।