• চা শিল্পে বড় ধাক্কা: বিধ্বস্ত ৪০ বাগান, ১১ কোটির ক্ষতির শঙ্কা
    বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: প্রকৃতির রোষে বড়সড় ধাক্কা চা শিল্পে। প্রাথমিক হিসেব অনুসারে, ডুয়ার্সের ৪০টি বাগানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা। কোথাও রাস্তা, সেতু ভেঙেছে। বৃষ্টির জলে চা গাছ, মজুত কাঁচা পাতা ও চায়ের ক্ষতি হয়েছে। আবার কোনও বাগানের একাংশ নদীর জলের তলায়।  এনিয়ে চা শ্রমিক ও বাগান মালিকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। সোমবার উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কিছু চা বাগানে জল জমে রয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে সমীক্ষা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ভারী শিল্পবিহীন উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চা শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে কয়েক লক্ষ মানুষ জড়িত। শনিবার রাতে পাহাড় ও সমতলে ভারী বৃষ্টি, বিভিন্ন নদীর জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব পড়েছে চা শিল্পে। ইতিমধ্যে বেশকিছু বাগান জলমগ্ন। সেগুলির মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার চ্যাংমারি বাগান অন্যতম। স্থানীয় সূত্রের খবর,সংশ্লিষ্ট বাগানে ৫০ হাজার চা গাছ, কারখানায় মজুত ৫৫ হাজার কেজি চা, ৭০ হাজার চা পাতা, শ্রমিকদের ১৫০টি কোয়ার্টার, ১২টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত। বাগানের ২৫ হেক্টর জমি জলমগ্ন। এখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। জলপাইগুড়ির কুরতি চা বাগানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। এখানে ভেঙেছে তিনটি রাস্তা। গাটিয়া নদী গতিপথ পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট বাগান গ্রাস করে ফেলতে পারে। বানারহাটের মরাঘাট ও রিয়াবাড়ি বাগানও বিপন্ন। আলিপুরদুয়ারের মেচকাপাড়া বাগানের অবস্থাও শোচনীয়। সংশ্লিষ্ট বাগানে কর্মীর সংখ্যা ৬ হাজার। এখানে ২ হাজার চা গাছ, ৩০ ফুট লম্বা বাঁধ, ১০০ ফুট লম্বা রাস্তা, তিনটি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগানের প্রায় ৩০ হেক্টর জমি নদীর জলের তলায়।

    স্থানীয়রা বলেন, নদীর স্রোতের ধাক্কায় হাজার হাজার চা গাছ ওয়াশআউট হওয়ার পাশাপাশি বাগানের বেশকিছু জমি জলের তলায়। কোথাও এক হাঁটু, আবার কোথাও এক কোমর জল রয়েছে। জল নেমে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জমিতে পড়ে থাকবে বালি, নুড়ি পাথর। কাজেই, প্রচুর জমিতে চা গাছ বসানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ই঩ন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের সম্পাদক সুমিত ঘোষ বলেন, প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা। অবিলম্বে বাগানগুলির অবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি।

    ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানগুলি পুনর্গঠনের দাবি শ্রমিকরাও করেছেন। ইতিমধ্যে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত বাগানের তালিকাও প্রস্তুত করেছে। শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্য সরকার সহায়তা না করলে এই শিল্প ঘোর সংকটে পড়বে। তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান নকুল সোনার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪০টি। এরমধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ও বানারহাটে ১০টি করে, আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকে ১২টি ও মাদারিহাট-বীরপাড়ায় পাঁচটি বাগান রয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার সহায়তা করবে বলেই আশা।
  • Link to this news (বর্তমান)