• ‘ফোটো তুলতে এসেছেন?’ দুর্গতদের হাতে আক্রান্ত বিজেপি এমপি
    বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, নাগরাকাটা: ত্রাণের নামগন্ধ নেই। খালি হাতে কনভয় নিয়ে ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে জনরোষের শিকার হলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সোমবার নাগরাকাটার সুলকাপাড়ায় আসেন তাঁরা। গাড়ি থেকে নামতেই তাঁদের ঘিরে ধরেন দুর্গতরা। বিপর্যয়ের পর এত দেরিতে কেন এলেন? স্থানীয় বিজেপি নেতারাই বা কোথায় ছিলেন? এখন কি শুধুমাত্র ফোটোশ্যুট করার জন্য এসেছেন? এইসব প্রশ্ন তুলে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাসিন্দারা। দুর্গতদের প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে গাড়ি ঘুরিয়ে বিজেপি নেতারা পালানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তখনই তাঁদের উপর আছড়ে পড়ে জনরোষ। ইট ছুড়তে থাকেন দুর্গত মানুষরা। তার আঘাতেই রক্তাক্ত হন মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের গাড়ির কাচ ভেঙে দেয় উত্তেজিত জনতা। ক্ষোভের পারদ এমনই ছিল যে, শঙ্করকে জুতো ছুড়ে মারতে উদ্যত হন দুর্গতরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এরপরই আক্রান্ত বিজেপি নেতারা তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে এলাকা ছাড়েন। প্রথমে চালসায় সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করান তাঁরা। পরে চিকিৎসার জন্য শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সুলকাপাড়ায় যখন বিজেপি নেতৃত্ব আক্রান্ত হন, তখন পাশেই বামনডাঙায় ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা ও নাগরাকাটার বিধায়ক পুনা ভেংরা। এখানেই শেষ নয়। তুফানগঞ্জে বিজেপির জেলা সহ সভাপতি উজ্জ্বলকান্তি বসাক এবং শিলিগুড়িতে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ও আক্রান্ত হয়েছেন। কুমারগ্রামে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন বিধায়ক মনোজ ওরাওঁ। এদিনের ঘটনায় তৃণমূলের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। তা অস্বীকার করেছে তৃণমূল। বিষয়টি দিল্লি পর্যন্ত গড়িয়েছে। রাজ্যের থেকে এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। এদিকে খগেন মুর্মুকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দিল্লি এইমসে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। 

    এদিন নাগরকাটার কালীখোলায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় যে কেউ যেতে পারেন। কিন্তু ৩০-৪০টি গাড়ি নিয়ে ঢোকা ঠিক নয়।’ এরপরও অবশ্য তিনি জনপ্রতিনিধিদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘দুর্যোগের সময় সবাইকে শান্ত থাকতে হবে। এমন কিছু করবেন না, যা বাঞ্ছনীয় নয়।’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘আমরা হিংসাকে সমর্থন করি না। এদিন যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণই বিজেপির কর্মফল।’ দলের তরফেও এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা হয়েছে, ‘উত্তরবঙ্গের মানুষ বারবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে। অথচ বিজেপি প্রতারণা করেছে। চরম হতাশা থেকেই এমন ঘটনা।’ যদিও শমীকের কটাক্ষ, ‘উত্তরবঙ্গের জন্য রাজ্য বাজেটে যে টাকা বরাদ্দ হয়, তাতে জল গরম হয় না। এরপরও বরাদ্দের মাত্র ২৪ শতাংশ খরচ হয়। বাকিটা চলে যায় অন্য খাতে।’
  • Link to this news (বর্তমান)