বিপর্যয়ে হাহাকার, নিখোঁজ বহু, দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতিপূরণ ও চাকরি ঘোষণা মমতার
বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি: লন্ডভন্ড পাহাড়-ডুয়ার্স। চারদিকে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। ম্লান উৎসবের আমেজ। ভয়াবহ বিপর্যয়ের জেরে মিলিয়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের মুখের হাসি। দুধিয়া-মিরিক, দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ি বা জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা, বানারহাট, গয়েরকাটা, ক্রান্তি—সবত্রই হাহাকার। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। প্রবল বর্ষণ ও ধসের জেরে রবিবারই পাহাড় ও ডুয়ার্স মিলিয়ে ২৮ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছিল। এদিন নাগরাকাটার বামনডাঙা চা বাগানের মডেল ভিলেজ থেকে ফের চারটি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এনিয়ে এখান থেকে ন’টি দেহ উদ্ধার হল। পাশাপাশি, তোর্সা নদীতে ভেসে আসা অজ্ঞাতপরিচয় দু’টি দেহও এদিন উদ্ধার হয়েছে কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে। জলঢাকার স্রোতে কোচবিহারের মাথাভাঙা-১ ব্লকের জোরশিমূলি বিধ্বস্ত। সেখানে রবিবার পুকুর ও নদীতে তলিয়ে যাওয়া দু’জনের দেহ উদ্ধার হয় এদিন। এদের মধ্যে একজন বালক, অন্যজন বৃদ্ধ। ফলে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৩৬। এখনও নিখোঁজ বহু। দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ি ও সিওক অঞ্চলে নিখোঁজ দু’জন। নাগরাকাটার বামনডাঙাতেও বিপর্যয়ের পর থেকে বেশ কয়েকজনের হদিশ মিলছে না। স্বজন হারানোর হাহাকার সর্বত্র। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বহু বাড়িঘর, গবাদি পশু। প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণ শিবিরে কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের এখন ভরসা বলতে সরকারি সহায়তা।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাজ্য পুরোপুরিভাবে রয়েছে বলে এদিন নাগরাকাটার কালীখোলায় দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপর্যয়ে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে এদিন তিনি ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। সঙ্গে পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়ে দেন, জল নামলেই সার্ভে শুরু হবে। যাঁদের বাড়িঘর ভেসে গিয়েছে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা তৈরি করে দেবে রাজ্য। চা বাগানের ক্ষতিপূরণে, বাগান কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে কাজ করবে। জলের তোড়ে যেসব রাস্তা, সেতু ভেঙেছে, সেগুলিও ধাপে ধাপে তৈরি করে দেওয়া হবে। যেসব এলাকায় যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, সেখানে ইতিমধ্যে রাস্তা ও সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘মিরিকে ভেঙে পড়া সেতু দ্রুত তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে মানুষজন ও হাল্কা গাড়ি যাতে চলাচল করতে পারে, সেজন্য হিউম পাইপ দিয়ে আগামী ২০ দিনের মধ্যে অস্থায়ীভাবে সেতু করে দেবে রাজ্য।’ এদিন নাগরাকাটার দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিপর্যয়ে সব হারানো মানুষজনের করুণ আর্তি শোনেন। সেইমতো প্রশাসনের কর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। আজ, মঙ্গলবার তিনি মিরিকে দুর্গত এলাকায় যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠির দুর্গত এলাকায় যান রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। অরূপবাবু বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির জেরে যাঁদের নথি হারিয়ে গিয়েছে বা নষ্ট হয়েছে, তাঁদের জন্য স্পেশাল ক্যাম্প হবে।’
বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমেছে। ফলে এদিন নতুন করে পাহাড়ে ধসের খবর নেই। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং ও সিকিমের লাইফ লাইন এনএইচ-১০ ও দার্জিলিংগামী ১১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, পাঙ্খাবাড়ি রোড খোলা। ধসের জেরে অবশ্য বন্ধ রোহিণীর রাস্তা। দুধিয়া হয়ে মিরিকের রাস্তাও বন্ধ। পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে বিশেষ জোর দিয়েছে প্রশাসন। এপর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ জন পর্যটককে সমতলে নামিয়ে আনা হয়েছে। গাড়ির ব্যবস্থা করে তাঁদের ফেরানো হচ্ছে। মিরিক, পুলবাজার ও সুখিয়াপোখরিতে কিছু পর্যটক রয়ে গিয়েছেন। যাঁরা পাহাড়ে রয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে হোটেল, রিসর্ট যেন থাকা-খাওয়ার জন্য কোনও টাকা না নেয়, তার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘প্রয়োজনে রাজ্য ওই টাকা দেবে। কোচবিহারেও এমন বিপর্যয় হতে পারে। ফলে তিনি সতর্ক করেছেন প্রশাসনকে। বাসিন্দাদেরও সজাগ থাকতে বলেছেন।’