সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: বিঘার পর বিঘা জমি ডলোমাইট মিশ্রিত পলি ও জলের তলায়। মাথায় হাত চাষিদের। ধানের শিষে ফুল আসার সময় কয়েকশো বিঘা ধান খেত পলিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হাহাকার করছেন আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমার-১, ২ ও পূর্ব কাঁঠালবাড়ি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমন চাষিরা। রবিবার একদিনের বিপর্যয়ে চোখের সামনে এভাবে ধান খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা চাষিরা।
দুর্যোগে শিসামারা নদীর ঘোলা জলে প্লাবিত হয়েছে আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমার-১, ২ ও পূর্ব কাঁঠালবাড়ি এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাতটি মৌজার আমন ধানের খেতে ভুটানের ডলোমাইট মিশ্রিত পলি পড়েছে। জল ও পলিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার আমন চাষিরা।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লক কৃষি আধিকারিক অজিত রায় বলেন, তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টরের মতো আমন খেতে পলি পড়েছে। সেই প্রাথমিক রিপোর্ট ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।
কৃষিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমন ধান নষ্ট হয়েছে শালকুমার-১ এ। ডলোমাইট মিশ্রিত পলি পড়ে এই পঞ্চায়েতের প্রধানপাড়া, নতুনপাড়া, মুন্সীপাড়া ও জলদাপাড়া এই চারটি মৌজার আমন ধান নষ্ট হয়েছে। তারপরেই রয়েছে শালকুমার-২ পঞ্চায়েত এলাকাটি। এই পঞ্চায়েতের দু’টি মৌজা সিধাবাড়ি ও সিরুবাড়ি মৌজার আমন খেত নষ্ট হয়েছে। তুলনায় কম ক্ষতি হয়েছে পূর্ব কাঁঠালবাড়ি পঞ্চায়েত এলাকাটি। পঞ্চায়েতের শুধু পূর্ব কাঁঠালবাড়ি মৌজার গাড়ারজোত এলাকাটির আমন ধান নষ্ট হয়েছে পলি পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বলেন, এখন আমনের পাশকাঠিতে ধানের ফুল বের হচ্ছে। শিশে ধানও বের হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে একদিনের দুর্যোগে সব পরিশ্রম বিফলে গেল। চাষিরা বলেন, ডলোমাইট মিশ্রিত পলিতে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় ধানের গাছ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। চাষিরা জানান, এখন কীভাবে তাঁদের সারা বছরের অন্ন জোগাড় হবে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
শালকুমার-২ পঞ্চায়েতের সুরিপাড়ার খগেন বর্মন বলেন, আমার কয়েক বিঘা আমন খেত ডলোমাইট মিশ্রিত পলিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। ধানের গাছগুলি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কীভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না। ওই এলাকারই কানাই বর্মন ও রমেশ রাভা বলেন, আমাদেরও কয়েক বিঘা ধান পুরো নষ্ট হয়ে গেল। সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ না পেলে কীভাবে আমরা এখন ঘুরে দাঁড়াব বুঝতে পারছি না।
শালকুমার-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় রাভা বলেন, ভুটানের পলি পড়ে প্রচুর আমন ধান খেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাষিদের সত্যি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।
এদিকে, তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষতি হওয়া আমনের খেত সোমবার ঘুরে দেখেন বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। বিধায়ক বলেন, এজন্য আমি বার বার ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠনের কথা বলছি। এই কমিশন গড়ে না উঠলে আগামীদিনে ভুটানের ডলোমাইট মিশ্রিত পলিতে ডুয়ার্সের কৃষি ফসলের আরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার তো তা শুনছে না। নিজস্ব চিত্র।