নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার ও সংবাদদাতা, দেওয়ানহাট: ভুটান ও ডুয়ার্সে ভারী বৃষ্টিপাতে রবিবার ভোর রাত থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে তোর্সা নদী। হঠাৎ করে তোর্সায় জলস্ফীতির জেরে মানুষ, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে কাঠ, গাছের গুঁড়ি জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে। সোমবার সকালে কোচবিহারে পুণ্ডিবাড়িতে তোর্সা নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয় দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। রবিবার রাতেও তুফানগঞ্জের চৌকুশি বলরামপুরে কালজানি নদীতে ভেসে যাওয়ার সময় তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
রবিবার তোর্সায় জলস্ফীতির সময় বিপুল পরিমাণে কাঠ, গাছের গুঁড়ি স্রোতের জলে ভেসে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রত্যেকেই। এভাবে বিপুল পরিমাণে লগ জলে ভেসে যাওয়ার নজির গত একশো বছরেও ঘটেনি বলে দাবি পরিবেশপ্রেমীদের। প্রবল স্রোতে সেগুলি যখন ভেসে যাচ্ছিল তখন নদীর চেহারা একদম বদলে গিয়েছিল। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ কাঠ কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। অনেকে মনে করছেন, জঙ্গলে কেটে রাখা কাঠ জলে ভেসে আসছে। কিন্তু বনদপ্তরের একটি সূত্র দাবি করেছে, এসব কাঠ এদিকের জঙ্গলের নয়। এই বিপুল পরিমাণ কাঠ ভুটান থেকে ভেসে এসেছে। আর সেগুলির অধিকাংশই পাইন প্রজাতির কাঠ। যা এদিকের জঙ্গলে হয় না।
প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুরে যখন তোর্সার জলে কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে তখন কোচবিহারের ফাঁসিরঘাট, বিসর্জনের ঘাট, ঘুঘুমারি সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সেগুলি সংগ্রহের জন্য বহু মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নেমে পড়েছিলেন। আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ থেকে কোচবিহারের বালাভূত এলাকা পর্যন্ত তোর্সার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০২ কিলোমিটার।
এই দীর্ঘ পথের অরণ্য পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এই কাঠ ভেসে এসেছে, না কি তোর্সার আরও উপরের দিকে ভুটান থেকে এই কাঠ এসেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কোচবিহারের পরিবেশপ্রেমী অরূপ গুহ বলেন, যে লগগুলি ভেসে এসেছে তার কিছু দু’দিকে করাত দিয়ে কাটা। এই ধরনেরই কাঠ এদিন ভেসে এসেছে। পাশাপাশি নদীতে চাপা পড়ে থাকা কাঠও হতে পারে। তোর্সা নদীর ধারে পুণ্ডিবাড়ি থেকে জলদাপাড়া পর্যন্ত বনাঞ্চল। এগুলি সবই সেদিক থেকে এসেছে। বিপুল পরিমাণ কাঠের পুরোটাই ভুটান থেকে ভেসে এসেছে এমনটা মনে হয় না। এমনটা বলা হলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় থাকে। কোচবিহার বনদপ্তরের এডিএফও বিজনকুমার নাথ বলেন, প্রবল বর্ষণে তোর্সায় যে কাঠ ভেসে এসেছে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সেগুলি পাইন প্রজাতির গাছ। জলের স্রোতে ভেসে এসেছে। এদিকে সোমবার সকালে পুন্ডিবাড়ি থানা এলাকার তোর্সা নদীতে অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ দু’টিকে ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। এরপর পুলিস গিয়ে দেহ দু’টি উদ্ধার করে। এর মধ্যে একটি বাঁশদহ লতিবাড়ি ও অন্যটি দেউতিবাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে। পুলিস তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। নিজস্ব চিত্র।