নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: বৃষ্টিতে ভাসবে পুজো— এই খবরে মন ভেঙেছিল বাঙালির। পুজোর আনন্দ মাটি না হলেও উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়তে হয়েছে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিকে। প্রকৃতির রুদ্ররোষ কার্যত তছনছ করে দিয়েছে উত্তরবঙ্গকে। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার পর্যটক ট্রিপ কাটছাঁট করে ফেরার ট্রেন ধরছেন। কারও আবার লক্ষ্মীপুজোর পরদিন ট্রেন ধরার কথা ছিল। কেউ আবার কালীপুজোর ছুটিতে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কিন্তু বন্যা বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের শোচনীয় অবস্থা দেখে ভয়ে বুকিং বাতিলের হিড়িক শুরু হয়েছে।
টানা বৃষ্টির জেরে জেরে উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায়। অতি বৃষ্টির কারণে ধস নেমেছে পাহাড়ী এলাকায়। একের পর এক রাস্তা, সেতু জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। খেলনার মতো নদীর জলে ভেসে গিয়েছে বহু বসত বাড়ি, হোটেল, হোম স্টে। মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ২৩ জনের। শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং, সিকিম যাওয়ার বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ধস নেমেছে। কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের। বন্যা বিধ্বস্ত পাহাড়ের ছবি দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে যাঁরা উত্তরবঙ্গ যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, তাঁরা আর কোনও ভাবেই যেতে চাইছেন না। ট্যুর অপারেটরদের কাছে মুহুর্মুহ ফোন আসছে বুকিং বাতিলের জন্য। খোঁজ চলছে বিকল্প জায়গার।
সিউড়ির একটি ট্যুর অপারেটর সংস্থার কর্ণধার সৌমাল্য ঘোষ বলেন, বুকিং বাতিলের জন্য ফোন তো আসছেই। তবে সোমবার থেকে পাহাড়ে আর ভারী বৃষ্টি হয়নি। তাই আমরা পর্যটকদের এখনই বুকিং বাতিল করতে বারণ করছি। আগামী ১১ অক্টোবর উত্তরবঙ্গে বুকিং রয়েছে। আমাদের মাধ্যমেই ১৩ অক্টোবর ভুটানে যাবেন একদল পর্যটক। তাঁরা কিছুটা ভয়ে থাকলেও আশা করছি এই কয়েকদিনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বিশেষ সমস্যায় পড়তে হবে না পর্যটকদের। সেইসঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর সংযোজন, আমাদের সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে যে সমস্ত পর্যটক পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেককেই আমরা নিরাপদে শিলিগুড়িতে নামিয়ে আনতে পেরেছি। তবে এরজন্য একটু সময় ও ভাড়া বেশি লাগছে। সেই নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে মনোমালিন্যও হচ্ছে। অনেকেই প্যাকেজের অতিরিক্ত টাকা গুনতে নারাজ! আর এক পর্যটন ব্যবসায়ী শুভজ্যোতি দত্তবনিক বলেন, যাঁরা গিয়েছেন তাঁদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে, নতুন করে উত্তরবঙ্গের বুকিং আর হচ্ছে না।
সোমবারই বাইকে চড়ে সিকিম যাওয়ার কথা ছিল বোলপুরের একটি দলের। কিন্তু বন্যা বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন তাঁরা। তবে, বেড়াতে যাওয়া অবশ্য তাঁরা বাতিল করেনি। গন্তব্য বদলেছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। পুরুলিয়া ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহিত লাটা বলেন, উত্তরবঙ্গে দুর্যোগের কারণে মানুষ আর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যাচ্ছেন না। বরং বহু পর্যটকই দেখছি উত্তরবঙ্গের বুকিং বাতিল করে পুরুলিয়ায় অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছেন। রবিবারই সপরিবারে অযোধ্যা পাহাড়ে পৌঁছেছেন হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা দীপ্ত হালদার। তিনি বলছিলেন, বেঁচে থাকলে উত্তরবঙ্গে আবার যাওয়া হবে। তবে প্রথমবার পাহাড়ে যাবে বলে অনেক স্বপ্নই দেখেছিল ছোট দুই ছেলেমেয়ে। কিন্তু যাওয়া হল না। তাই বাড়িতে মন খারাপ করে বসে না থেকে পুরুলিয়ায় চলে এসেছি। পাহাড়, ঝর্না, জঙ্গল সবই আছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডাও লাগছে। ছেলেমেয়েদের কাছে এই অনেক।