মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির ফাঁদ থেকে রেহাই, কমছে বকেয়া ঋণ, লোনের পরিমাণ ৩৩৪৫ থেকে কমে ১৮৯১ কোটি
বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানি থেকে লোন নিয়ে সাধারণ মানুষের ফাঁপরে পড়ার ঘটনা নতুন নয়। চড়া সুদে লোনের টাকা ফেরত দিতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয় সাধারণ মানুষকে। যার ফলে সচরাচর খোলা বাজারে কোম্পানিগুলোর বকেয়া লোন অনেকটাই বেশি থাকে। কিন্তু নদীয়া জেলাতে ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গিয়েছে। বিগত এক বছরে নদীয়া জেলায় গ্রামীণ এলাকায় মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানিগুলির বকেয়া লোনের গ্রাফ নিম্নমুখী। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নদীয়া জেলার মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানিগুলির লোনের পরিমাণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে কার্যত অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। যা গ্রামের অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলোর চড়া সুদের ফাঁদ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। এর পিছনে অন্যতম কারণ হল, স্বল্প সুদে সরকারি ব্যাঙ্ক লোন। যা দিয়ে অনেকেই মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির লোনের টাকা পরিশোধ করছেন। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নদীয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক সৈকত গাঙ্গুলি বলেন, এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। প্রশাসনের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে স্বল্প সুদে লোন দেওয়া হয়। যাতে তারা নানা কাজের মাধ্যমে সাবলম্বী হয়ে ওঠেন।
সম্প্রতি মাইক্রোফিন্যান্স ইনস্টিটিউশন অব ওয়েস্টবেঙ্গলের তরফ থেকে একটি বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নদীয়া জেলায় লোন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৫৪ জন। সেই বছর খোলা বাজারে বকেয়া লোনের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে দেখা যাচ্ছে লোন গ্রাহকের সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫৪৬ জন। অর্থাৎ লোন গ্রাহকের সংখ্যা ২ লক্ষের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, খোলা বাজারে বকেয়া লোনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হচ্ছে সীমান্তের নদীয়া জেলায় গ্রামের মানুষের লোন নিয়ে পরিশোধ করার প্রবণতা বাড়ছে অনেকটাই বেড়েছে।
প্রশাসনিক মহলের দাবি, সারা বছর সরকারের তরফ থেকে নানারকম লোন দেওয়া হয়। যেখানে সাধারণ মানুষকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে লোন দেওয়া হচ্ছে। মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ড, কিষান ক্রেডিট কার্ড, এমএসএমই, এনআরএল সহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় লোন দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের লোনই সাধারণ মানুষকে সাহায্য করছে মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলোর চড়া সুদের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে। নদীয়া জেলাতেই ২০২৪-২৫ অর্থ বর্ষে এনআরএলএম প্রকল্পের আওতায় বারোশো কোটি টাকার বেশি লোন দেওয়া হয়েছে। যা যথাসময়ে পরিশোধও করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। এই প্রকল্পের আওতায় নদীয়া জেলায় ৭ লক্ষ ২০ হাজার মহিলা যুক্ত রয়েছেন।
প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, মহিলারা ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটাতে লোন নিচ্ছেন। গ্রামেগঞ্জে তাঁদের অনেকেই মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলো থেকেও লোন নিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা সেগুলো বিভিন্ন কাজের ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন এবং সেটা বকেয়া লোনও মেটাচ্ছেন। যা গ্রাম্য অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে।
উল্লেখ্য, চাষবাস, ছোটখাটো ব্যবসা কিংবা পরিবারের প্রয়োজনে অনেকেই মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেন। কিন্তু সমস্যার শুরু হয় সুদের হার ও কিস্তি পরিশোধে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এই সংস্থাগুলোর নির্ধারিত সুদের হার ব্যাংকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি মেটানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। কিস্তি বাকি পড়লেই ফিল্ড অফিসার বা এজেন্টরা বাড়িতে গিয়ে চাপ তৈরি করেন। কিন্তু সেই চিত্রেই বিগত এক বছরে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে নদীয়া জেলায়।