নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বাইক চুরির অভিযোগে অনেক রাতে গ্রেফতার হয়েছে স্বামী। সেই খবর পেয়ে সকালেই হন্তদন্ত হয়ে থানায় দৌড়লেন স্ত্রী। পুলিশের ধারণা হয়, স্বামীকে ছাড়ানোর আর্জি জানাবেন তিনি। কিন্তু, আর্জি শুনে ভুল ভাঙল পুলিশের। করজোড়ে অনুরোধ করলেন—‘স্বামীকে বেশকিছু দিন লকআপে রেখে দিন।’ সেই সঙ্গে স্ত্রীর অভিযোগ, গত ৮ আগস্ট তাঁর দু’ভরি সোনার গয়না চুরি করে নিয়েছে ধৃত স্বামী। লকআপে রেখে সেই গয়না উদ্ধার করুক পুলিশ। সোমবার সকালে নন্দকুমার থানায় ওই ঘটনায় হুলস্থূল পড়ে যায়। ধৃতের নাম চিন্ময় চক্রবর্তী। বাড়ি নন্দকুমার থানার বাসুদেবপুর গ্রামে। রবিবার রাতে বাইক চুরির অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সোমবার ধৃত যুবককে পূর্ব মেদিনীপুর সিজেএম কোর্টে পাঠিয়েছে পুলিশ। ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ধৃতের কাছ থেকে চোরাই বাইকও উদ্ধার হয়েছে।
রবিবার রাতে নন্দকুমার থানার বাসুদেবপুর কন্যা গুরুকূল হাইস্কুলের সামনে থেকে নাড়ুগোপাল জানা নামে একজনের একটি বাইক চুরি হয়। সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্তে নামে। রাত ৩টা নাগাদ নামালক্ষ্যা বাজারের কাছে নাকাচেকিং পয়েন্টে চুরি যাওয়া বাইক সহ চিন্ময় চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে নন্দকুমার থানার ওসি অমিত দেব উপস্থিত ছিলেন। তারপর ওই যুবককে নন্দকুমার থানায় আনা হয়। চুরির অভিযোগে চিন্ময় ধরা পড়ার খবর তার বাড়িতে জানানো হয়। ওই খবর পাওয়ামাত্রই স্ত্রী আরতি নন্দকুমার থানায় যান। থানা লকআপের ভিতর স্বামীকে দেখার পর আরও বেশ কিছুদিন এভাবে রাখার আর্জি জানান আরতি।
জানা গিয়েছে, ধৃত চিন্ময় চক্রবর্তীর বাড়িতে স্ত্রী এবং ১০ বছরের এক ছেলে রয়েছে। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার বাসনায় রোজ লটারির টিকিট কাটত চিন্ময়। এছাড়া মদে আসক্তিও প্রবল। মদ ও লটারির টিকিটের টাকা জোগাড় করতে গত ৮ আগস্ট স্ত্রীর সোনার গয়না চুরি করে বলে এদিন আরতি থানার অফিসারদের জানান। স্ত্রীর সেইসব গয়না একটি সোনার দোকানে বন্ধক রেখে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে লটারির টিকিট কেটেছে। সেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর রবিবার সন্ধ্যায় বাসুদেবপুরে স্কুলের সামনে থাকা একটি বাইক চুরি করে নেয়। তমলুক শহরে একটি নার্সিংহোমে কাজ করেন আরতি। অনেক কষ্ট করে রোজগারের টাকা স্বামী হাতিয়ে নেয় বলে তাঁর অভিযোগ। এদিন সকালে নন্দকুমার থানায় তিনি বলেন, ‘লটারি আর মদের নেশায় স্বামী আমার গয়না হাতিয়ে নিয়েছে। আমি চাই, পুলিশ ওকে চাপ দিয়ে সেই গয়না উদ্ধারের ব্যবস্থা করুক। কিছুদিন জেলে থাকলে মদ ও লটারির টিকিট কাটার নেশা কাটতে পারে। আমি চাই, শ্রীঘরে থেকে নিজেকে সংশোধন করুক।’ নন্দকুমার থানার পুলিশ জানিয়েছে, বাসুদেবপুরে মেচেদা-হলদিয়া সড়কের ধারে স্কুলের সামনে ওই বাইকটি রাখা ছিল। সেটি চুরি হয়ে যায়। সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরে চিন্ময়কে শনাক্ত করা হয়। রাতেই নামালক্ষ্যার কাছে নাকা চেকিংয়ে তাকে ধরা হয়। নন্দকুমার থানায় বাইক চুরিতে ধৃত চিন্ময় চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র