• ধানের ছড়ায় লক্ষ্মীর সাজ, হাতের কাজেই সুদিনের আশায় শিবরানি
    বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • সুকান্ত বসু, কলকাতা: ধানের ছড়া তাঁর হাতে কথা বলে। শুকনো ধান বুনে নকশা তৈরি শিবরানির কাছে যেন ছেলেখেলা। সেগুলির কোনওটা ঝাড়বাতির মতো দেখতে হয়। কোনওটা যেন চামর। কোনওটা হাতপাখার মতো, যেন বেত বুনে তৈরি। অনেকে বলেন, এ কাজ ঠিকমতো শিখতে জীবন গড়িয়ে যায় মানুষের। শিবরানি ঢালি এই কাজটি অবলীলায় করে ফেলেন। তবে পোড়া কপাল তাই বিক্রির খদ্দের পান না। ফলে অভাবের জন্য যখন যে কাজ জোটে এই বৃদ্ধ বয়সে তাই করতে হয়। না হলে পেটে টান। ভাত জোটে না।  

    শিবরানির স্বামী মারা গিয়েছেন। তাঁর তিন ছেলে। তবে কেউই বিধবা মা’র খোঁজখবর রাখেন না। ফলে জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে আজ বৃদ্ধা একা। দেখতে দেখতে বয়স ৬৯ বছর হয়ে গিয়েছে। এই অশক্ত শরীরেও পরিশ্রমই একমাত্র ভরসা। লক্ষ্মীপুজো এলে ধানের ছড়ার চাহিদা বাড়ে। একটু আশার আলো ঢুকবে বলে তখন শিবরানি স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু এবার বাজার এতই মন্দ যে সামান্য টাকাও আয় হয়নি। ফলে একগাদা শিল্পকর্ম পড়েই আছে অনাদরে। বিক্রি হয়নি।

    রাজারহাটের বাসিন্দা শিবরানি। সেখান থেকে বহু পথ ঠেঙিয়ে কলকাতায় আসতে হয় রোজগারের আশায়। লক্ষ্মীপুজোর দিন বিকেলে যখন ঘরে ঘরে শাঁখ বাজছে। ধূপ-ধুনোর গন্ধ ভেসে আসছে। কলকাতার বাতাস যখন সেসব কারণে পবিত্র। তখনও লক্ষ্মী এল না শিবরানির কাছে। একরাশ অভিমান নিয়ে বৃদ্ধা বলেন, ‘লক্ষ্মী এল না গো। ক’টা পয়সার জন্য রোজ ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরই। তবে লক্ষ্মীর দেখা পেলাম না আজও।’ সোমবার পুজো হচ্ছে ঘরে ঘরে। শ্যামবাজারের একটি ফুটপাতে বসে শিবরানি। বললেন, ‘ধানের ছড়ার কাজ ছোটবেলাতেই শিখেছি। বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করি। আগে লোকে কিনত। এখন কম কেনে। ঠিক মতো বিক্রি হয় না। এখন আর এ কাজ করতে উৎসাহ পাই না।’ 

    শুকনো ধান বেশ ধারাল। কাঁটার মতো আঙুলে ফোটে। এই কাজ করতে গিয়ে আঙুল দিয়ে রক্ত বেরয়। তবু করতে হয়। তবু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও সব বিক্রি হয় না। লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় রুপোর থালার মতো কোজাগর চাঁদ আকাশের টিপ হয়ে জ্বলজ্বল করছে। তাতে পেকে ওটা ধানের মতো সোনালি রং। সেরকম একই রঙের সোনালি ধানের ছড়ার শিল্পকাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন শিবরানি। আজ তাঁর ঘরেও আলো ফেলছে কোজাগরী পূর্ণিমা। শিবরানি লক্ষ্মীর পাঁচালি বের করলেন, ‘ নারায়ণী লক্ষ্মী রমা/দোষ হলে মা করিস ক্ষমা/ পদ্মাসনা সনাতনী/ সবাই যেন হয় মা ধনী...’ 
  • Link to this news (বর্তমান)