শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। বহু রাস্তায় নেমেছে ধস। জলস্তর বেড়ে বিপদসীমা ছাপিয়ে গিয়েছে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকার মতো নদীগুলি। সোমবার সেই দুর্যোগকবলিত উত্তরবঙ্গে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরের মধ্যেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছান তিনি। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও ডিজিপি রাজীব কুমার। আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা সেনা ছাউনিতে নেমে সেখান থেকে গাড়ি করে নাগরাকাটায় পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে দুর্যোগে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের একজন সদস্যকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার কথাও মমতা জানান। উত্তরবঙ্গ পরিদর্শনে গিয়ে এই দুর্যোগ পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্য, ভুটান থেকে জল ছাড়ার কারণেই এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যা পরিস্থিতিকে তিনি ম্যান মেড বন্যা বলে উল্লেখ করেছেন। এর সঙ্গে সোমবার নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়ে বিজেপি নেতা শঙ্কর ঘোষ ও খগেন মুর্মুর উপর যে হামলা হয়েছে তা নিয়েও শান্তি ও একতার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনীতি ভুলে এখন দুর্গত অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। আগামী দুদিন উত্তরবঙ্গে থেকে এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে নিজেই জানিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিঙে বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তিস্তার জলের কারণে। রবিবার সকালে নবান্নের কন্ট্রোল রুমে বসে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছিলেন উত্তরের পাঁচ জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে। সোমবার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গে যান মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলের দিকে বিপর্যস্ত নাগরাকাটার কালীখোলা এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। কথা বলেন স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করেন মমতা। আগামী ১-২ দিনের মধ্যে ফের জোয়ার আসতে বলে সতর্ক করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পাশপাশি মমতা জানিয়েছেন, যেসমস্ত রাস্তা, বাড়ি ভেঙে গিয়েছে সেগুলি মেরামতির দায়িত্ব রাজ্য সরকার নেবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বিপর্যস্ত মিরিক। আজ, মঙ্গলবার মিরিকে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘যেসব সেতু ভেঙেছে, সেগুলি ছোট সেতু। আমাদের মিরিক ব্রিজও নতুন করে তৈরি করতে হবে। পিডব্লিউডি-র আধিকারিকরা, মুখ্যসচিব সবাই এখানে আছেন তাঁরা সমীক্ষা করবেন। মিরিকে যে নতুন ব্রিজটি তৈরি হচ্ছে, তা শেষ হতে এক বছর লাগবে। আপাতত একটি অস্থায়ী সেতু বানানো হচ্ছে, যা শেষ হতে প্রায় ২০ দিন লাগবে।’ সেতু ভেঙে কোনও মৃত্যু হয়নি বলেও সোমবার উত্তরবঙ্গ থেকে জানিয়েছেন মমতা।
সোমবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘ভুটান এবং সিকিমের জলে উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১২ ঘণ্টায় টানা ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অতি দুর্যোগের সঙ্গে ম্যান মেড বন্যা। এত জল যাবে কোথায়? আমরা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের জল সহ্য করি। আর কত করব? পাহাড় থেকে পর্যটকদের নামিয়ে আনা হচ্ছে। এই কাজের জন্য প্রায় ৪৫ টি ভলভো বাস ও উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহন দপ্তর থেকেও বাস নেওয়া হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের একজন বাসিন্দা এখনও নিখোঁজ। বাকি সব পর্যটকদের নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি হোটেলগুলোকে পর্যটকদের থেকে টাকা নিতে বারণ করেছি। দরকার পড়লে রাজ্য সেই টাকা দেবে। মিরিক ও নাগরাকাটায় কমিউনিটি কিচেন করার প্রস্তুতি চলছে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছে এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর হিসাব রয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জন মিরিক-কালিম্পঙে এবং নাগরাকাটায় আরও পাঁচ জন।
মৃতদের পরিবারকে অর্থসাহায্য প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা কখনও জীবনের বিকল্প হতে পারে না। এটা আমাদের তরফ থেকে সামান্য সামাজিক কর্তব্য। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে। পরিবারের এক জনকে দেওয়া হবে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি।’ এর পাশাপাশি এদিন সিকিমের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত-ভুটান নদী কমিশন গঠন করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম।