• জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গণ্ডার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রকৃতির রোষে পড়ে উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান এখন যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দু’দিনের প্রবল বর্ষণে তোর্সা, বুড়ি তোর্সা, মালঙ্গি ও হলং নদীর জল ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বনাঞ্চল। রবিবার দুপুরে এমন পরিস্থিতিতে উদ্যানের একাধিক গণ্ডার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে আসে, যার মধ্যে দুটি গণ্ডার গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়ে।

    বনকর্মীরা রাতভর চেষ্টা চালিয়ে একটিকে ফের জঙ্গলে পাঠিয়ে দিলেও অন্যটি পশ্চিম কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পেরিয়ে মেজবিল নিউরোড পর্যন্ত চলে আসে। মধ্যরাতে জাতীয় সড়কের কর্মীরা বুড়ি তোর্সা সেতুর কাছে সেটিকে প্রথম দেখেন। প্রাণীটি পরে আশ্রয় নেয় একটি বাঁশবাগানে। বন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কৌতূহলী মানুষের ভিড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত শত মানুষ গণ্ডার দেখতে আসায় উদ্ধারকাজ ক্রমশ জটিল হচ্ছে। বনদপ্তর জানিয়েছে, ‘মানুষের ভিড় না কমলে উদ্ধার অভিযান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

    প্রবল বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের পাহাড় থেকে সমতল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নদীর ঢেউয়ে জলমগ্ন বনাঞ্চলের রাস্তা, ধ্বংস হয়েছে কয়েকটি সেতু। এতে অন্তত ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং কয়েকটি বন্যপ্রাণীও। জলদাপাড়ার মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে হলং নদীর কাঠের সেতু ভেসে যাওয়ায়। প্রায় ২৫ জন পর্যটক জলদাপাড়া টুরিস্ট লজেও আটকা পড়ে, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় যাদের পরে উদ্ধার করা হয়।

    উল্লেখ্য, বাংলার একশৃঙ্গ গণ্ডারের প্রধান আবাসস্থল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। এখানে ৩০ থেকে ৩৫টি গণ্ডারের পাশাপাশি হাতি, বন্য মহিষ, গৌর, চিতল হরিণ ও অসংখ্য পরিযায়ী পাখি বাস করে। বনদপ্তরের ধারণা, এই বৃষ্টিতে বহু প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। তোর্সা, দিনাই, মালঙ্গি ও হলং নদীর তীরে বিস্তৃত ঘন জঙ্গল, শাল-সেগুন বন ও ঘাসভূমি এখন জলমগ্ন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গণ্ডার ও হরিণরা বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে গ্রামাঞ্চলে।

    দুর্গাপুজোর সময়ে জলদাপাড়া পর্যটনের অন্যতম ব্যস্ততম কেন্দ্র। প্রতি অক্টোবর দেশে-বিদেশ থেকে ৭ থেকে ৯ হাজার পর্যটক এখানে এসে ভিড় করেন। তবে এবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পর্যটন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জেরে হোমস্টে ও স্থানীয় ব্যবসা বড় ধাক্কা খেয়েছে। মানুষের রুটিরুজির পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

    বনদপ্তর জানিয়েছে, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে রাস্তা ও সেতুর মেরামত কাজ শুরু হবে। তখন পর্যটন ফের ধাপে ধাপে চালু হবে। বনকর্মীরা আশা ব্যক্ত করেছেন যে, ‘শিগগিরই জলদাপাড়া আবার তার প্রাণ ফিরে পাবে।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)