• বৃষ্টির দোসর লোডশেডিং, হোটেলে ভরসা মোমবাতি
    আনন্দবাজার | ০৬ অক্টোবর ২০২৫
  • একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। শনিবার শেষ বিকেলে দার্জিলিংয়ের রাস্তায় মোমবাতি কিনতে বেরিয়েছিলেন সমিত সেন। সঙ্গে স্ত্রী মৌসুমী আর ছ’বছরের ছেলে আহান। আগের রাত থেকে বিদ্যুৎ মিলেছে সাকুল্যে এক ঘণ্টা। তাই বেড়াতে গিয়ে সরকারি বাংলোর ঘরে মোমবাতি জ্বালানোর তোড়জোড়।

    তুমুল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। পুজোর ছুটিতে বেড়াতে গিয়ে বহু পর্যটক বিপাকে পড়েছেন। অনেকে হোটেলে বন্দি। হাওড়ার বালির বাসিন্দা সমিতেরা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রোহিণীর রাস্তা ধরে গাড়িতে দার্জিলিংয়ে যান শনিবার দুপুরে। ওঠেন দার্জিলিং স্টেশনের অদূরে পূর্ত দফতরের বাংলোয়। পথে মাঝেমধ্যেই অল্পবিস্তর বৃষ্টি হয়েছে। দার্জিলিংয়ে বৃষ্টির বহর বাড়ে। রাত ৭টা থেকে মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টি হয় সারারাত। বাংলোর ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টি পড়েছে ঘরে।

    রবিবার কাকভোরে টাইগার হিলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বৃষ্টির বহরে সমিতেরা বুঝতে পারেন, বেরোনো অসম্ভব। বৃষ্টি থামে সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ। ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হয়। দিনভর আর সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। সমিত বলেন, ‘‘বৃষ্টি থামতে শুনি, কোনও রাস্তা দিয়েই যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। জোড়বাংলা, রোহিণীতে রাস্তা ভেঙেছে। মিরিকে সেতু।’’

    বৃষ্টি থামলেও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় সারাদিন কাটাতে হয় সমিতদের। তাঁরা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ লোডশেডিং হয়। সকাল ৭টায় বিদ্যুৎ আসে। ঘণ্টাখানেক পরে ফের লোডশেডিং। বিকেল গড়িয়েও ফেরেনি। তবে দোকানপাট খোলা। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা নেই। কিন্তু রবিবার যাঁদের ফেরার কথা ছিল, তাঁদের অনেকে বিপাকে পড়েন। অভিযোগ, বাড়তি দিন থাকতে হোটেলে ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। একই অবস্থা গাড়িভাড়ার ক্ষেত্রেও। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়ে পড়েন।

    পরিস্থিতি দেখে আজ, সোমবার কোলাখাম যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন তাঁরা। ঠিক করেছেন আজও দার্জিলিংয়েই থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন। আশা, তার মধ্যেই রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত হবে।

    শ্রীরামপুরের তন্ময় ভট্টাচার্য বন্ধুদের সঙ্গে পাহাড়ে যান সপ্তমীর রাতে। শনিবার কালিম্পংয়ের সামালবংয়ে যাওয়ার পথে তিস্তার রূপ দেখেই তন্ময়, তাঁর সঙ্গী নরেশ জৈনরা আঁচ করেছিলেন, রাস্তা ভেসে যেতে পারে। রাত ৮টা থেকে তুমুল বৃষ্টি নামে। সঙ্গে ঘন ঘন বজ্রপাত আর বিদ্যুতের ঝলকানি। ঘণ্টাখানেক পরেই লোডশেডিং। বিদ্যুৎ ফেরে সকাল ১০টা নাগাদ।

    তন্ময় জানান, রবিবার সন্ধ্যায় ফেরার ট্রেন। তাঁরা ভোরেই বেরোতে চেয়েছিলেন। চালক জানান, রাস্তার পরিস্থতি না জেনে বেরোনো যাবে না। শেষে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের দেখভাল করা একটি রাস্তা দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছন। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার এক জায়গায় গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে খানিক বিপত্তিও হয়। দু’-একটি গাছ পড়েছিল। সরিয়ে দেওয়া হয়। তন্ময়ের কথায়, ‘‘ওই রাস্তা না থাকলে সমস্যা হত।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই সময়ে তিস্তায় নীল জল দেখে আগে প্রাণ জুড়িয়েছে। এ বার দেখলাম ঘোলা জলের ফুঁসে ওঠা তিস্তা। যেন কাদাগোলা জল বইছে খর স্রোতে!’’

    ডানকুনির বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক অর্ঘ্য বাতসা রবিবার দুপুরে পরিবার নিয়ে ধূরগাও থেকে কালিম্পংয়ের কোলাখামে হোমস্টেতে পৌঁছেছেন। রাতে তিনি বলেন, ‘‘আসার পথে কোথাও ধসের মুখে না পড়িনি। তবে, টানা লোডশেডিং চলছে। মঙ্গলবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ফেরার ট্রেন। পরিস্থিতি ঠিক কী, কাল সকাল না হলে বুঝতে পারব না।"
  • Link to this news (আনন্দবাজার)