• উৎসবের আলোর নীচে আঁধারেই ওঁরা
    আনন্দবাজার | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • উৎসবের মরসুমে কাকদ্বীপ উপকূল এলাকায় মাঝে মধ্যে বৃষ্টি নামলেও আপাত ভাবে মনোরম পরিবেশ। দুর্গাপুজো হয়েছে ধুমধাম করে। লক্ষ্মীপুজোর বাজারে ভিড়, ঘরে ঘরে আলপনা। কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো বিষাদ লুকিয়ে আছে নামখানা থেকে কাকদ্বীপ বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে। কারণ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী তিনটি ভারতীয় ট্রলার আটক করেছিল। প্রতিবেশী দেশে বন্দি হয়ে আছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪৮ জন মৎস্যজীবী। যাঁদের অনেকেই পরিবারগুলির একমাত্র আয়ের ভরসা।

    ফলে পুজোর মধ্যে সাজগোজ নয়, চিন্তা আর কান্নাই আঁকড়ে ধরেছে ঘরের মানুষদের। কারও চোখে উৎকণ্ঠা, কারও মুখে আক্ষেপ — পুজো তো পেরিয়ে গেল আলোর উৎসব দীপাবলির আগে ফিরবেন তো ওঁরা?

    সমুদ্রের খামখেয়াল বোঝা দায়। বঙ্গোপসাগরে, নদীর মোহনায় কিংবা সুন্দরবনের খাঁড়িতে মাছ ধরতে গিয়ে মাঝে মধ্যে দিক হারান জেলেরা। অজান্তেই আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘন করেন। তারপরেই শুরু হয় দুঃস্বপ্নের রাত জাগা। ভিন্ দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরাধী হিসেবে ধরে নিয়ে পাঠিয়ে দেন জেলে।

    বাংলাদেশি জেলেদেরও একই পরিণতি হয়। সম্প্রতি ৩২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী বন্দি রয়েছেন এ রাজ্যের সংশোধনাগারে। উপকূলের জেলবন্দি মৎস্যজীবীদের পাড়ায় এখন এক অন্য ছবি। উঠোনে শিশুরা খেলা করছে, অথচ পাশে বসে কান্না আটকাতে পারছেন না মা। বৃদ্ধ বাবা তাকিয়ে আছেন সমুদ্রের দিকে, সন্তানের ফেরার অপেক্ষায়। পাড়া জুড়ে উৎকণ্ঠার ছায়া।

    কাকদ্বীপের মনকৃষ্ণ দাসের গল্প যেন এক পরিবারের নয়, গোটা উপকূলের। মাঝনদীতে ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় স্রোতের টানে জলসীমা পেরিয়ে যান। তারপর থেকে বন্দি। তাঁর স্ত্রী দশমী দাস বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা বাবার অপেক্ষায় বসে আছে। পুজোয় নতুন জামা হয়নি। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান নেই। আমাদের জন্য উৎসব নয়, আলো নয়। আঁধারেই হয় তো অপেক্ষা করতে করতে ফুরিয়ে যেতে হবে।’’

    কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক জলসীমা বিভাজন করা যায় না সব সময়ে। তাই অনেক সময়ে অজান্তে ঢুকে যায় ট্রলার। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বন্দি মৎস্যজীবীদের।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তও আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দ্রুত ওঁদের ফিরিয়ে আনার।’’

    কিন্তু স্বজনহারা বা দূরে থাকা উপকূলের মানুষের কাছে ফিকে উৎসব, আলোর রোশনাই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)