এই সময়, শিলিগুড়ি: প্রকৃতির সামনে ভানুমতীও এমন খেল দেখাতে পারবে কি-না সন্দেহ! শনিবার রাতভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাহাড়, ডুয়ার্স। তবে প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় এবং ডুয়ার্সে বেশিদিন জল একজায়গায় আটকে থাকবে না। বয়ে যাবে। আর এই বিষয়টিই আপাতত প্রশাসনের স্বস্তির কারণ। দুর্যোগের পরে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় অতিক্রান্ত। তার মধ্যেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও অগ্রগতি দ্রুত হচ্ছে, কোথাও ধীর গতিতে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে তৎপরতার সঙ্গে কাজ কররছে স্থানীয় এবং রাজ্য প্রশাসন। তৎপর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও। রবিবারই ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক খুলে দেওয়া হয়। প্রবল বৃষ্টি, তিস্তার রুদ্র রূপের সামনেও বিরিকদারা, ২৮ মাইল, ২৯ মাইল এলাকায় রাস্তার ধস সরিয়ে দ্রুত খুলে দেন কর্মীরা।
শিলিগুড়ি থেকে সুকনা-তিনধারিয়া হয়ে দার্জিলিংয়ে যাওয়ার রাস্তায় ধস নেমে যান চলাচল ব্যাহত হয়। রবিবার সন্ধ্যায় জোড়বাংলোয় ধস সরিয়ে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কও খুলে দেওয়া হয়। সোমবার সকাল থেকে সেই রাস্তা দিয়ে স্থানীয়দের নিয়মিত যাতায়াতের ছবি ফিরে এসেছে।
বিখ্যাত দুধিয়া সেতু ভেঙে পড়ার দৃশ্য আপামর বাংলার মানুষকে বিচলিত করেছে। মিরিকের সঙ্গে শিলিগুড়ির ওই পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এ দিন সকাল থেকে সেই পথে সেতুর ডাইভারশন তৈরির কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। বালি ফেলে নদীখাতের আয়তন ছোট করে হিউমপাইম বসানো হবে। তার উপর দিয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে যান চলাচলের পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা। কলকাতায় বসে দপ্তরের পদস্থ কর্তারা ডাইভারশনের কাজ তদারকি করছেন। কার্শিয়াং যাওয়ার আর একটি রাস্তা রোহিণী রোডেও ধস নামে।
রোহিণী এলাকায় রাস্তা মেরামতির কাজ চলছে। তবে এখনই সেই রাস্তা খোলার সম্ভাবনা নেই। প্রশাসন জানিয়েছে, পাঙ্খাবাড়ি রোড সর্বদাই খোলা। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে প্রশাসনের তৎপরতা প্রশংসাজনক। এ দিন পাহাড় অনেকটাই স্বাভাবিক।'
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে মিরিকে। এ ছাড়াও সুখিয়াপোখরি থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে। সেই সমস্ত এলাকায় স্থানীয়দের বাড়ি, পোম-স্টে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়দের জন্য ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ধস সরিয়ে এলাকাগুলির স্বাভাবিক ছবি ফেরাতে কাজ করে চলেছে এলডিআরএফ। নতুন করে পাহাড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ার কোনও খবর নেই। তবে এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। এর মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রও রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবারই দিনভর চরকি পাক খেতে দেখা যায় শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবকে। ঘুরে এসেছেন দুধিয়াতেও। গৌতম বলেন, 'দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রাজ্য সরকার তৎপর।' চরকির মতো পাক খেতে দেখা গিয়েছে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েলকেও।
রবিবার দুপুর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড় এবং ডুয়ার্সে নতুন করে বৃষ্টি না-হওয়ায় নদীর জলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে এ দিন সকালে সিকিমের সিংতাম এবং রংপোর মাঝে নতুন করে ধস নামায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ২৩। রবিবার নাগাকাটায় পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর ছিল। সোমবার আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।