• আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধ উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল, জানালেন বনমন্ত্রী বিরবাহা, হাতি সাফারির আগাম বুকিং বাতিল করল বনদপ্তর...
    আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রকাশ মণ্ডল

    উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল পরিদর্শন করলেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। সোমবার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বন্যাকবলিত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, আপাততম ডুয়ার্সের সমস্ত বনাঞ্চলে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফেল খুলে দেওয়া হবে জঙ্গল।

    বিরবাহা বলেন, “জঙ্গলে বন্যার জলে ডুবে দু’টি একশৃঙ্গ গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে। একটি জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের জঙ্গলে এবং অপরটি গরুমারা জঙ্গলে। জঙ্গলের ভিতরে এখনও সম্পূর্ণভাবে জল নামেনি। তাই আরও কোনও বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়েছে কি না সেই বিষয়ে বলা সম্ভব নয়। বনকর্মীরা চারিদিকে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আপাতত এই পরিস্থিতিতে ডুয়ার্সের সমস্ত বনাঞ্চলে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণীদের শারীরিক পরিস্থিতি সুনিশ্চিত করার পর ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বনাঞ্চল।”

    মন্ত্রী আরও বলেন, “সমগ্র উত্তরবঙ্গে এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী। আমরা বারবার ইন্দ্র-ভুটান নদী কমিশন দাবি করেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র সেই বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। তার ফলে ভুটান জলপ্রপাত থেকে ছাড়া জলে সমগ্র ডুয়ার্স ভেসে যাচ্ছে। কত সাধারণ মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।”

    সোমবার এই বিষয়ে রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বড়াইক একইভাবে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকার বন্যাকবলিত সমস্ত মানুষের পাশে আছে। দুর্যোগ ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মানুষদের কোন ধরনের সাহায্য দেয়নি। প্রতি বার ভুটান পাহাড় থেকে আসা জলে উত্তরবঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কত মানুষ ও প্রাণীদের প্রাণ গিয়েছে। আমরা বারবার কেন্দ্রকে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশনের দাবি করছি। কিন্তু কেন্দ্র রাজনীতি করছে। উত্তরবঙ্গের ক্ষয়ক্ষতির জন্য কেন্দ্র দায়ী।” 

    শনিবার ভোরে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্লাবিত পাহাড় থেকে সমতল। ক্ষতিগ্রস্ত ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা। প্লাবনে জঙ্গল বন্ধ থাকায়, ইতিমধ্যেই প্রচুর পর্যটক ডুয়ার্স থেকে ফিরে গিয়েছেন। প্রচুর পর্যটক আগাম বুকিং বাতিল করছেন। বুকিংয়ের টাকা ফেরত চাইছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য জঙ্গল বন্ধ হওয়ায় পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ী সকলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

    এই বিষয়ে জলদাপাড়া টুরিস্ট লজ অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জহরলাল সাহা বলেন, “তিন মাস বন্ধ থাকার পর পুজোর সময় পর্যটন ব্যবসার মোক্ষম সময়। এই সময় দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ডুয়ার্সে প্রকৃতির আনন্দ নিতে ছুটে আসেনি। কিন্তু পুজো শেষ হতে না হতেই উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। প্লাবিত হয়ে যায় জঙ্গল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। জঙ্গলের ভিতরে জল জমে থাকায় ঘুরতে পারছেন না পর্যটকরা। অনেক পর্যটক নিজেদের বুকিং বাতিল করে ফিরে গিয়েছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য বনাঞ্চল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, আগাম বুকিং বাতিলের জন্য পর্যটকরা ফোন করতে শুরু করে দিয়েছেন। বুকিংয়ের টাকা ফেরত চাইছেন। ফলে পর্যটনের ভরা মরশুমে ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারকে আবেদন করব, দ্রুত বনাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে পর্যটকদের জন্য জঙ্গল খুলে দিক। নইলে ডুয়ার্সের পর্যটন ভেঙে পড়বে।”

    এই বিষয়ে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের ডিএএফও প্রবীণ কাশোয়ান বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতেই জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের জঙ্গলে হাতি এবং কার সাফারি বন্ধ করা হয়েছে। জঙ্গলে জল জমে থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য জঙ্গল বন্ধ রাখা হবে। ফলে বর্তমানে কোনও পর্যটক হাতি সাফারি করতে পারবেন না। সমস্ত হাতি সাফারির বুকিং বাতিল করা হয়েছে। দুর্যোগের সময় যারা হাতি সাফারি করতে পারছেন না, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জলদাপাড়া জঙ্গলের হাতি সাফারির আগাম বুকিং বন্ধ থাকবে।”

    এই বিষয়ে জলদাপাড়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক বিজয় কুণ্ডু বলেন, “পরিবার নিয়ে পুজোর ছুটি কাটাতে গত শনিবার জলদাপাড়া এসেছিলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা আটকে পরি। জঙ্গল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘোরার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফলে বিষন্ন মনে আগামী বুকিং বাতিল করে ফিরে যাচ্ছি।”
  • Link to this news (আজকাল)