• অযোগ‍্য নিয়োগ স্বার্থেই কি সচিব বসান পার্থ?
    আনন্দবাজার | ০৭ অক্টোবর ২০২৫
  • অযোগ‍্য প্রার্থীদের নিয়োগের রাস্তা খুঁজতেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন সচিব নিয়োগ করেন বলে আদালতের নথিতে সিবিআই দাবি করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অশোক সাহাকে এসএসসির সচিব পদে বসানো হয়। এর কয়েক সপ্তাহ আগেই পার্থ বিকাশ ভবনে জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন বলে দাবি।

    এসএসসির এক আধিকারিকের লিখিত বয়ান আদালতে পেশ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার। আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ এবং গ্রুপ সির মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় সেই বয়ানের কথা উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২০-র জানুয়ারিতে পার্থর সঙ্গে একটি বৈঠকে ছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, আপ্ত-সহায়ক সুকান্ত আচার্য, এসএসসির তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, এসএসসির আধিকারিক অশোক সাহা প্রমুখ। শিক্ষা দফতরের তৎকালীন প্রধান সচিবকেও ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন পার্থ। জনৈক এসএসসি আধিকারিকের বয়ানে প্রকাশ, প্রভাবশালীদের সুপারিশ মাফিক অযোগ‍্য প্রার্থীদের নামের ক্রমবর্ধমান তালিকা এবং সেই মতো শূন‍্য পদ সৃষ্টির তাগিদে পার্থ বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলেন। তিনি আধিকারিকদের বকাবকিও করেন বলে দাবি। অশোক সাহাকে তখনই এসএসসির সচিব পদে বসানোর নির্দেশ মন্ত্রী দেন বলে সিবিআইয়ের পেশ করা বয়ানের নথিতে প্রকাশ। অশোক সিবিআই হেফাজতেই রয়েছেন।

    বয়ান মারফত সিবিআই জানিয়েছে, ২০২০-র করোনা অতিমারির সময়েও শিক্ষা দফতরে নবনির্মিত একটি অফিসে বেশ কয়েক জন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। নিয়োগপত্র দিতে গিয়ে কিছু আধিকারিক আবার কোভিডে আক্রান্ত হন। তখন সেই দফতরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বন্দোবস্তও করা হয় বলে বয়ানে দাবি।

    তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, এসএসসির চারটি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ, নবম-দশম, প্রধান শিক্ষক পদের শূন‍্য তালিকা দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র শূন্য পদের তালিকাও তৈরি করতে হবে। শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং অশোক সাহা ২০২০-র জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস মারফত প্রায় ১,৩৯৯টি শূন্য পদ চিহ্নিত করেন।

    ওই অধিকারিকের লিখিত বয়ানে দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের নামের হাতে লেখা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগপত্র তৈরি করতে রাজি না-হলে সেই আধিকারিককে কলকাতা থেকে জেলায় বদলি করে দেওয়া হত। এসএসসির অযোগ্য প্রার্থীদের নামের সম্পূর্ণ তালিকা উদ্ধার করা অসম্ভব বলেও ওই আধিকারিক দাবি করেছেন। কারণ বহু অযোগ্য প্রার্থী পরীক্ষাই দেননি। তাঁদের পরীক্ষার ওএমআর শিট থাকবে না। ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সমস্ত ওএমআর শিট নষ্টও করে ফেলা হয়।

    সিবিআইয়ের দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের নিজেদের পছন্দমত স্কুলে নিয়োগপত্র দেওয়া হত। এবং শূন্য পদ না থাকলেও স্কুলগুলিকে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের মৌখিক নির্দেশ দিতেন শান্তিপ্রসাদ সিংহ, এসএসসি সচিব অশোক সাহা এবং আর এক সচিব সুবীরেশ ভট্টাচার্য। লিখিত বয়ানে ওই অধিকারিক জানিয়েছেন, ২০২০ সালে সচিব পদে বসার পরে অশোক সাহা নিজের মেয়েকেও আরটিআই আইনের জবাবি চিঠি লেখার দফতরে নিয়োগ করেছিলেন।

    বেআইনি নিয়োগের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর প্রশ্রয়েই অশোক নিজের মেয়েকে দফতরে বসান বলে সিবিআইয়ের সূত্রে দাবি। কারণ, প‍্যানেলের যোগ‍্য প্রার্থীরা অনেকেই আরটিআই আইনে চিঠি লিখছিলেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)